সময়ের চাকা ঘুরে আজ ৫০ বছর পূর্ণ করলো দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে আজকের এই দিনে চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলার এক নির্জন পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় প্রায় ১৭০০ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গৌরবের ৫০ বছর মহাসমারোহে আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম শহরে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ ও আগামীকাল দুই দিনব্যাপী উদযাপিত হবে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব।
সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে গতকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছতে শুরু করেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন হোটেল, মেস, স্বজনদের বাসাবাড়ি ও বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে। আজ সকালেও অনেকে পৌঁছেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমানদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম।
প্রকৃতির পাঠশালা হিসেবে খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। প্রতিষ্ঠা লগ্নে মাত্র ৪টি বিভাগ, ৮ জন শিক্ষক ও ২২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ৪৩টি বিভাগ ও ৭ টি ইনস্টিটিউটে ২৩ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। এই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন ৬৮৭ জন শিক্ষক।
প্রাণের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে বর্ণিল সাজে। ১৭০০ একর এলাকা জুড়ে আজ উৎসবের আমেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পুরো রাস্তা জুড়ে শোভা পাচ্ছে নানা রঙের পতাকা। বিভিন্ন বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে নানা রঙে ফুটিয়ে তুলছে রঙিন আলপনা।
আজ ১৮ নভেম্বর বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সুবর্ণ জয়ন্তী র্যালির মধ্যে দিয়েই শুরু হবে উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। রঙ-বেরঙের বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন ও তিনটি প্রাণীর প্রতিকৃতি দিয়ে সজ্জিত থাকবে এ র্যালি।
সন্ধ্যায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সন্মানে জিইসি কনভেনশনে অনুষ্ঠিত হবে `ওয়েলকাম নাইট`। যেখানে প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা সংগীত পরিবেশন করবেন। এছাড়া থাকছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান।
১৯ নভেম্বর (শনিবার) দ্বিতীয় দিনের আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এদিন বেলা সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের শুভ উদ্বোধন করবেন। এছাড়া প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সুবর্ণ জয়ন্তীর বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে স্মারক সম্মাননা। দিনভর প্রাক্তনদের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বিকেলে ক্যাম্পাস মাতাতে মঞ্চে উঠবে দেশ সেরা তিন ব্যান্ডদল আর্টসেল, ওয়ারফেজ ও লালন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১৯ নভেম্বর বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া শহরের জমায়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে থেকে সকাল ৮ টায় ৪৫টি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
৩৫ হাজার মানুষের এ আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ দিন ৫ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে ক্যম্পাসে। থাকবে র্যাবের টহল দল। এছাড়া সাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মহা আয়োজনকে সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠান স্থলের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বজায় রাখতে ৩০ ফুট উঁচু একটি `ওয়াচ টাওয়ার` স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বাইনোকুলারের মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানের নজরদারি করা হবে। এছাড়া অধিক নিরাপত্তার জন্য অনুষ্ঠান স্থলের চারপাশে ২০টি সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশাল এ আয়োজনের পরদিন ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ