টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে অসংখ্য চর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। সাগরে চর ও ডুবোচর এলাকায় বয়া না থাকায় নৌযান চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারনে নৌযানগুলো ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার কূল ঘেষে চলাচল করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গোপসাগরে বয়া না থাকায় প্রতিদিন পর্যটকবাহী জাহাজ ডুবোচরে কয়েক ঘন্টা আটকা পড়ে। পরে জোয়ার শুরু হলে জাহাজ নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
গত শনিবার বিকালে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে এলসিটি কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ডাইন ক্রুসে প্রায় দেড় হাজারের মত পর্যটক ডুবোচরে আটকা পড়ে যায়। এছাড়া গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে ৫শ' পর্যটক নিয়ে সেন্টমাটিনে যাওয়ার পথে এলসিটি কাজল নাক্ষংদিয়া এলাকায় ডুবোচরে আটকা পড়ে। প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে।
বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রায় দুইশ' বছর আগে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন জেগে ওঠে। টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটি ইউনিয়ন। এতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ বাস করে। নদী ও সাগর রুটের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এ রুটে শাহপরীর দ্বীপ জেটি থেকে নাইক্ষ্যংদ্বীপ পর্যন্ত ডুবোচর জেগে ওঠায় মিয়ানমার কূল ঘেষে ঝুঁকির মধ্যে নৌযান চলাচল করছে। ড্রেজিং না হওয়ায় চ্যানেলটি দিন দিন নাব্যতা হারিয়ে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ডুবোচরে আটকে শতাধিক নৌযান ও বাণিজ্যিক পন্যের ট্রলার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
অন্যদিকে সেন্টমার্টিনে জাহাজযোগে হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমনে আসে। তাছাড়া বানিজ্যিক পণ্য ও গবাদী পশু ট্রলারে করে পরিবহন করা হয়। শত শত মাছ ধরা ট্রলার এ রুট ব্যবহার করে। দিনে মোহনা দিয়ে কোন মতে অতিক্রম করা গেলেও রাতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাড়ায় নৌরুটটি। সরকার কর্তৃক সাগরে নৌযানের সুবিধার্থে এ্যাসপারিকেল বয়া, চ্যানেল বয়া অথবা লাইটিং বয়া স্থাপনের নিয়ম থাকলেও বর্তমানে ডুবোচর এলাকায় নেই কোন বয়া। এ কারণে প্রতিনিয়ত ডুবোচরে আটকে ঘটছে নৌ দুর্ঘটনা।
এদিকে পর্যটকবাহী জাহাজ কর্তৃপক্ষ সাগরে বয়া স্থাপনে কয়েকবার নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের (আইওবিআইডাব্লিইওটিসির) কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পায়নি বলে অভিযোগ তাদের। কয়েক বছর আগে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সাগরে ছয়টি চর ও ডুবোচর এলাকায় চারটি বয়া স্থাপন করেছিল। বর্তমানে এসব বয়ার কোন অস্থিত্ব নেই।
কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ডাইন ক্রুস জাহাজের প্রথম শ্রেণির ক্যাপ্টেন ইংল্যান্ড মাষ্টার মনির হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন জানান, নাব্যতা হ্রাস পেয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটি থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত একাধিক চর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। এ রুটে বর্তমানে একটি বয়াও নেই। যার কারনে ডুবোচর এলাকা পার হতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। খুব সাবধানে ডেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাহাজ পার করতে হয়। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবসায়ী এম আবছার সোহেল জানান, মিয়ানমার থেকে পন্যবাহী ট্রলার আসতে বঙ্গোপসাগরের ডুবোচরে সমস্যা সৃষ্টি হয়। গত কয়েক বছরে ডুবোচরে আটকা পড়ে বেশ কিছু পন্যবাহী ট্রলার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ডুবোচর এলাকাগুলোতে বয়া স্থাপন ও ড্রেজিং জরুরি।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারনে ভাটায় পর্যটকবাহী জাহাজ ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এ রুটে ড্রেসিং ও বয়া স্থাপনে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ