৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০৯:২০

সম্রাটের হাতে হাতকড়া দেখে নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ, কান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্রাটের হাতে হাতকড়া দেখে নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ, কান্না

ঢাকা মহানগর আওয়ামী যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গতকাল রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্তবর্তী পুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে আটক করা হয়। এরপর সম্রাটকে নিয়েই তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে সন্ধ্যায় কার্যালয় থেকে সম্রাটকে নিয়ে র‌্যাব সদস্যরা নামতেই হঠাৎ স্লোগান ও হট্টগোল শুরু করে দেন তার সমর্থকরা। এ সময় তারা- ‘সম্রাট ভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই’- এরকম বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেন। সম্রাটের হাতে হাত কড়া দেখে সমর্থক ও নেতাকর্মীদের কাঁদতেও দেখা গেছে। পরে পুলিশ ধাওয়া করলে পালিয়ে যায় তারা। 

প্রায় ৫ ঘণ্টার অভিযানে র‌্যাব ওই কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ক্যাঙ্গারু ও হরিণের চামড়া, ইয়াবা এবং একটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অপরাধে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড  দেন। পরে রাত ৭টা ৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে সম্রাটকে নিয়ে যায় র‌্যাব।

জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে পুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে র‌্যাবের ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি আশপাশে অবস্থান নেয়। এ সময় সেখানে আশপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মধ্যরাতে মুনির চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির দোতলা বাড়ি ঘেরাও করে রাখে র‌্যাব-১। তখন ওই বাড়িতেই সম্রাট এবং যুবলীগ নেতা আরমান অবস্থান করছিলেন।

সম্রাট ও আরমানকে আটকের পর আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, মুনির চৌধুরী স্থানীয় জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ফেনীর মেয়র আলাউদ্দিনের ভগ্নিপতি। আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তবে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু যুবলীগ নেতা সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তার মাধ্যমেই সম্রাট মুনির চৌধুরীর বাড়িতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে তার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। সম্রাটের বাড়ি ফেনী বলেও জানান তারা।

বেলা পৌনে ২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের উপস্থিতিতে কালো গ্লাসের সাদা একটি মাইক্রোবাসে করে সম্রাটকে তার কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ র‌্যাব সদস্যরা তাকে কার্যালয়ের ভিতরে নিয়ে যান। একপর্যায়ে ভবনের প্রধান কলাপসিবল গেট আটকে দেওয়া হয়। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর নয়তলা বিশিষ্ট এই ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে ছয় দিন অবস্থান করেছিলেন সম্রাট। পরে তিনি অন্য জায়গায় চলে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অভিযান শেষ করে ভবনের নিচে এসে সাংবাদিকদের ভিতরে নিয়ে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ভবনে পাওয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, ইলেকট্রিক শকের মেশিন, ক্যাঙ্গারু ও হরিণের চামড়া, ডলার ও ভারতীয় রুপি জব্দ করে তৃতীয় তলায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। এরপর বিভিন্ন তলায় ঘুরে কয়েকটি আলিশান বেড রুম, ফ্রিজ, রাজকীয় চেয়ার দেখতে পাওয়া যায়। বেড রুমের পাশে ফ্রিজও রাখা ছিল। যেখানে কাটা ইলিশ মাছ ও মদের বোতল সাজিয়ে রাখা। এরপর ভবনের ছাদে গিয়ে বড় বড় গাছের একটি বাগান দেখা যায়। কার্যালয়ের ছাদের এই বাগানটিতে যাওয়া সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ ছিল বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।

চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে যুবলীগ নেতা সম্রাটের নাম আলোচনায় আসে। অভিযানে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা র‌্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। কিন্তু সম্রাট ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভোরে গ্রেফতারের পর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এনে দুপুর ১২টার দিকে তাকে উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতরে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের নিয়ে অভিযানে বের হয় র‌্যাব। বেলা সোয়া ১টার দিকে সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে যাওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে শান্তিনগরের সম্রাটের ভাই বাদলের বাসায় ও মহাখালী ডিওএইচএসে সম্রাটের বাসায়ও অভিযান চালায় র‌্যাব।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর