১৭ বছরেও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল না হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার জমি নিয়ে বিরোধের এক রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ২০০৪ সালে আইন হয়েছে। আছে আদালতের রায় ও নির্দেশ। তা সত্ত্বেও ১৭ বছরেও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন হলো না, যা আদালতের জন্য বিরক্তিকর।
রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে এসব কথা বলেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘১৭ বছরেও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারেননি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, জানান। ব্যবস্থা না নেওয়া হয়ে থাকলে প্রয়োজনে সচিবকে ডেকে আনা হবে।’
এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি বলেন, ২০১৩ সালে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচারক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তখন আদালত বলেন, ‘গ্রামারের কথা এই আদালতে বলবেন না।’
ডেমরার ডগাইর মৌজায় অবস্থিত সাড়ে চার কাঠা জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের পৃথক রায় ও সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ওই রিট করেন মোহাম্মদ আশরারুল আজিম। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নসীব কায়সার। পরে তিনি বলেন, হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই জমির অবস্থান ও দখলের উপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। জমির ভোগদখলে আছেন আশরারুল। ফলে তার দখলেই জমি থাকছে।
২০১৯ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্ট ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইবুনাল গঠন নিয়ে রায় দেন। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আদালতকে অবহিত করতে ভূমিসচিবকে নির্দেশ দেন।
রায়ে বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছরে ভূমি মন্ত্রণালয় আপিল ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় লাখ লাখ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ যাদের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর এই ভোগান্তি পোহালেন, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। দাঁড়াতে হবে জনগণের কাঠগড়ায়।
এদিকে আইনজীবীরা বলছেন, ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করা হয় ২০০৪ সালে। সেই সংশোধনীতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা রয়েছে। আইন অনুযায়ী দেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালগুলোর নেতৃত্বে আছেন যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের বিচারক। ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল না থাকায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের রায়, ডিক্রি ও আদেশে সংক্ষুব্ধ বিচারপ্রার্থী উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল