বিদ্যুৎ সেক্টরের সমন্বিত গ্রাহক সেবার লক্ষে হটলাইন ১৬৯৯৯ চালু করা হয়েছে। এখন থেকে বাংলাদেশের সব বিদ্যুৎ গ্রাহক সরাসরি এই হটলাইন নম্বরে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপ এবং চ্যাটবট এ তিন উপায়ে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যাবতীয় গ্রাহকসেবা নিতে পারবেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সেবার উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় এ সমন্বিত গ্রাহক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন হবে। বিদ্যুৎ খাতের ৬টি বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানির বিপিডিবি, আরইবি, ডেসকো, ডিপিডিসি, ওজোপাডিকো এবং নেসকো গ্রাহকরা এ সেবা পাবেন।যেভাবে সেবা পাবেন
১. কেন্দ্রীয় হটলাইন নম্বর ১৬৯৯৯-এ কল করার মাধ্যমে।
২. অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
৩. বিদ্যুৎ বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া পেজের চ্যাট বট অপশনের মাধ্যমে।
সেবা প্রক্রিয়া
১৬৯৯৯ নম্বরে কল করার পর বিপিডিবির জন্য ১, বিআরইবির জন্য ২, ডেসকোর জন্য ৩, ডিপিডিসির জন্য ৪, নেসকোর জন্য ৫ এবং ওজোপাডিকোর জন্য ৬ ডায়াল করে নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কল সেন্টার অপারেটরের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে গ্রাহক তার অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
কল সেন্টার অপারেটর ওই নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানির কমপ্লাইন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস)- এ গ্রাহকের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্যগুলো পূরণ করলেই তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অভিযোগটি সম্পর্কে অবগত হয়ে যাবেন।
একই সঙ্গে তথ্যটি বিদ্যুৎ বিভাগের সেন্ট্রাল কমপ্লাইন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আপডেট হয়ে যাবে। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অথরিটির ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে অভিযোগের ধরন, সর্বমোট অভিযোগ, অভিযোগের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপের সেবা প্রক্রিয়া
গ্রাহক অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। পাওয়ার ডিভিশনের অ্যাপটিতে প্রবেশের পর মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাপের হোম পেজে চলে যেতে পারবেন। হোম পেজের নিচে ‘এড একাউন্ট’ বাটনে ক্লিক করে গ্রাহক তার বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবেন। এরপর গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টের ধরন অনুযায়ী প্রিপেইড বা পোস্টপেইড নির্বাচন করবেন।
তারপর গ্রাহক তার মিটার নম্বর অথবা অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রবেশ করানোর পর, অ্যাকাউন্ট নম্বর এ ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে সে তার অ্যাকাউন্টের বিবরণ দেখতে পারবেন এবং এইঅ্যাকাউন্টের জন্য গ্রাহক যদি কোনো অভিযোগ করতে চান তাহলে ‘কারেন্ট কমপ্লেন’ এ ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা ফর্মটিতে যাবতীয় তথ্য পূরণ করার মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
এছাড়া ‘কমপ্লেন হিস্টোরি’-তে গিয়েও গ্রাহক আগের অভিযোগের সমস্ত তথ্য এবং তার অভিযোগগুলো কোন পর্যায়ে আছে তা দেখতে পারবেন। অ্যাপ ব্যবহার করার সময় যদি গ্রাহকের কল সেন্টারের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে অ্যাপে থাকা ‘হেল্প’ বাটনে ক্লিক করে সরাসরি কল সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারবেন।
অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রথমত সেন্ট্রাল কমপ্লাইন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তথ্য ভান্ডারে যুক্ত হবে। এরপর সেখান থেকে নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কমপ্লাইন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে এ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে অভিযোগটি সমাধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অভিযোগটি সম্পর্কে অবহিত হয়ে যাবেন।
চ্যাটবটের সেবা প্রক্রিয়া
গ্রাহকরা পাওয়ার ডিভিশনের আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে চ্যাট বট অপশনটি পাবেন। ‘চ্যাট বট অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে গ্রাহক তার সাধারণ জিজ্ঞাসাগুলোর তাৎক্ষণিক উত্তর পেয়ে যাবেন। কোনো জিজ্ঞাসার উত্তর তাৎক্ষণিক দেওয়া সম্ভব না হলে সেখানে থাকা কল সেন্টার অপারেটরের সঙ্গে ‘কথা বলুন’ বাটনে চাপ দেওয়ার মাধ্যমে গ্রাহক হটলাইনে কল করে তার জিজ্ঞাসাটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য :
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতের সমন্বিত গ্রাহক সেবায় ১৬৯৯৯ ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের লাইনে সমস্যা দেখা দেয়। একটা বড় সমস্যা হলো ফোন না করা পর্যন্ত সেখানে কেউ হাজির হয় না। অনেকে আবার জানেও না যে কোন নাম্বারে ফোন দেবে। কারণ একেক বিতরণ সংস্থার একেক নাম্বার। এসব সমস্যা সমাধানে ১৬৯৯৯ নম্বরটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই নাম্বারে কল দিলে আপনি যে বিতরণ সংস্থার সাহায্য চান সেটা পাবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই গ্রাহকসেবা তৈরি করতে ও বিতরণ সংস্থাগুলোকে বোঝাতে আমার ৫ বছর সময় লেগেছে। যেমন ডিপিডিসি বলেছিল যে তারা নিজেদের নাম্বার নিজেরা তৈরি করবে। বিদ্যুৎ খাতে ৪ কোটি গ্রাহক। আপনি এতো গ্রাহককে কীভাবে সেবা দেবেন? এজন্য আমরা প্রফেশনালের কাছে এসেছি। যে গ্রাহককে সবার কাছে পৌঁছে দেবে।
বিতরণ সংস্থাগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গ্রাহকদের কাছে থেকে কমপ্লেইন পাওয়ার পর সেগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন। কোন এলাকা থেকে বেশি অভিযোগ আসছে। সমস্যা বুঝে আপনাদের সেগুলোর সমাধান করতে হবে। নতুন এ সেবার প্রচুর প্রচারণা করতে হবে। যত বাসায় বিলের কাগজ দেওয়া হয় সেসবে এই নাম্বার দিয়ে দেবেন। এসএমএস করে জানাবেন। সব বিতরণ সংস্থা এক হয়েছে এ ব্যাপারটি ইতিবাচক।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ