২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২১:২৬

নির্বাচন সম্পর্কে জনমানুষের অনাস্থাবোধ দূর করা যায়নি : মেনন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন সম্পর্কে জনমানুষের অনাস্থাবোধ দূর করা যায়নি : মেনন

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ব্যর্থ করে সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হলেও নির্বাচন সম্পর্কে জনমানুষের যে অনাস্থাবোধ তা দূর করা যায়নি। 

মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মেনন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। 

বক্তৃতায় মেনন বলেন, সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দোসর বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নির্বাচন সম্পন্ন করা গেলেও সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই আগে ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এবারই সর্বপ্রথম এত অধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র সদস্য সংসদে এসেছেন। ফলে সংসদে কিছু নতুন রীতির সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেটা এমন না হয় যাতে সংসদীয় রীতির সৌন্দর্য নষ্ট হয়।  রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। দলের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে উপজেলা নির্বাচনকেও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়ায় নতুন কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা জন্ম নেবে কিনা সেটা দেখার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে ধরনের নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কথা বলছেন। এই ব্যবস্থায় ধনীরাই থাকবে, গরিব-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ নয়। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের জামানত এক লাখ, ভাইস-চেয়ারম্যানের জামানত ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। 

তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে ভিসানীতি, শ্রমিক অধিকার নীতি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে আসছিল। এই পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তখনই বলেছিলাম অবাধ নির্বাচন নয়, রেজিমচেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনই তাদের লক্ষ্য। এদেশে তাদের স্বাভাবিক সহযোগি ছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা দেশের অভ্যন্তরে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করার প্রয়াস নিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের প্রতিরোধ তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। আগুন সন্ত্রাস, ট্রেনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেল লাইন উপড়ে ফেলা নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে এই নির্বাচনটি হয়ে যাওয়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং অসাংবিধানিক ধারার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বিজয়। তবে এ কথা সত্য যে নির্বাচন সম্পর্কে জনমানুষের যে অনাস্থাবোধ তা দূর করা যায়নি। কালোটাকার প্রভাব, বিশেষ সংস্থার নিয়ন্ত্রণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব, শহরাঞ্চলগুলোতে ভোটারদের নগণ্য উপস্থিতি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। কিন্তু তা কোনোক্রমেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। নির্বাচন অনুষ্ঠান, সরকার গঠন সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা। এটা একইভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ১১টি প্রধান প্রতিশ্রুতির প্রথম প্রতিশ্রুতি। বাজার সিন্ডিকেট না ভাঙার কোনো কারণ নাই। কারণ কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের তা জানা। অন্য দলকে এ ব্যাপারে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে গণ-বণ্টন ব্যবস্থার পূর্ণ রেশনিং চালু করার কথা বলেছিলাম। সরকারকে বিষয়টা আরেকবার বিবেচনার জন্য বললাম।

মেনন বলেন, বর্তমান অর্থনীতিক পরিস্থিতি অর্থনীতি ক্ষেত্রে নয়া উদারনীতিবাদ অনুসরণের ফসল। এই নীতিতে মুষ্টিমেয়ের হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটে। বাংলাদেশে এই নয়া উদারনীতিবাদেরও বিকৃত প্রয়োগ ঘটছে। দুর্বৃত্তায়িত এই অর্থনীতি বিস্তৃত হয়েছে রাজনীতি ক্ষেত্রে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য দূরে থাক, আওয়ামী লীগ যে মিশ্র অর্থনীতির কথা বলেছে তার থেকে তারা আজ যোজন যোজন দূরে। 

তিনি বলেন, মানবতা থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা আজ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকিতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের উপর পরছে। এই হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করা আজ কর্তব্য।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর