শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি উত্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশিদের স্বাধীনতার আহ্‌বান জানানোর ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। ইতিহাস রচনার জন্য ৫০ বছর আগে এই সময়েই ভারত এবং বাংলাদেশের কূটনীতিকরা নিয়েছিলেন অনন্য ভূমিকা। ৫০ বছর পূর্তির এই সপ্তাহেই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের মার্চে বাংলাদেশের  স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র লড়াই শুরু হলে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে  যোগাযোগ ও পরিস্থিতি তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশ্ব কূটনীতিতেও শুরু হয় এক ঠান্ড লড়াই। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সর্বোচ্চ স্তরে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে একটি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেন।  এর পাশাপাশি জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় মঞ্চে পাকিস্তানের বর্বরতার বিষয়টিকে তুলে ধরার নির্দেশনা দেন।

পরে ১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতের তৎকালীন মন্ত্রী সর্দার শরণ সিংয়ের নেতৃতে ভারতীয় প্রতিনিধি দল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে কী ধরনের নিষ্ঠুরতা সংঘটিত হয়েছিল সেটি সারা বিশ্বকে অবহিত করেন। সাধারণ অধিবেশনের পূর্ণাঙ্গ সভায় কথা বলতে গিয়ে শরণ সিং সন্ত্রাসের রাজত্বের কথা বলেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের জেল হেফাজতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার কথাও পাকিস্তানকে বলেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘ওই এলাকায় আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে যেতে দেওয়া হয়নি এবং বিশ্বের সেই অংশে কী হচ্ছে তা গোপন করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। চারদিকজুড়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ।’ 

ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এ এন ডি হাসকারের বয়ান অনুসারে,  ভারত শুধুমাত্র জাতিসংঘে বাংলাদেশের সংকটকেই তুলে ধরেনি এ ছাড়াও অনানুষ্ঠনিক বৈঠকের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিউইয়র্কে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন করেছিল। সেই প্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন।   ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের জন্য সমর্থন জোগানোর উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছিলেন।

বাংলাদেশের অনুকূলে যুক্তরাজ্য, পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং পোলান্ডের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়। এমনকি এই ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের সম্পর্ক ছিন্ন করতেও সাফল্য লাভ করেন। ফলে ১৯৭১ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানপন্থি নির্দেশনা বন্ধ করতে সক্ষম হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর