ভারতের মুম্বাইয়ে বসবাস করেন নম্রতা নানগিয়া। স্বামী আর পাঁচ বছরের এক মেয়েসন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। মেয়ের জন্মের পর থেকেই তাঁরা আরেকটি সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু ভাবনা জেঁকে বসে মনে, খরচ বহন করা সম্ভব হবে কি?
একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে কাজ করেন নম্রতা। তাঁর স্বামী কাজ করেন একটি টায়ার কোম্পানিতে। ছোট্ট এ সংসারে একটি সন্তানের লালনপালনের খরচ ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সন্তানের বিদ্যালয়ের ফি, স্কুলবাসের খরচ, সাঁতারের ক্লাসের উচ্চ ব্যয়ভার জোগাতে হয়। কিন্তু নম্রতা নিজে যখন বেড়ে উঠেছেন, তখন এত বেশি খরচ হতো না। নম্রতা বলেন, ‘আমরা তখন শুধু বিদ্যালয়েই যেতাম। সহপাঠ্য বলে কিছু ছিল না। কিন্তু এখন সন্তানকে সাঁতার ও ছবি আঁকার ক্লাসে পাঠাতে হয়। খেয়াল রাখতে হয়, ওরা আর কী কী করতে পারে।’
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নম্রতা যে পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন, এটা ক্রমেই একটি বৈশ্বিক ধাঁচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ইচ্ছা অনুযায়ী সন্তান নিতে পারছে না। এজন্য সন্তানের লালনপালনের বাড়তি খরচ ও উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবকে অন্যতম কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে। ইউএনএফপিএ ১৪টি দেশের ১৪ হাজার মানুষের ওপর সন্তান নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জরিপ চালিয়েছে।
পাঁচজনের মধ্যে একজন বলেছেন, তাঁদের কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক সন্তান হয়নি বা তাঁরা সন্তানের আশাও করেননি। থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় জরিপটি করা হয়েছে।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এসব দেশে বসবাস করে। এর মধ্যে নিম্ন, মধ্য, উচ্চ-তিন ধরনের আয়ের দেশ রয়েছে। জরিপ করা হয়েছে, তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রজননের সময়মীমা পেরিয়ে গেছে, এমন মানুষের মধ্যে।
ইউএনএফপির প্রধান নাতালিয়া কানেম বলেন, বিশ্বজুড়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে। জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ দুই বা ততোধিক সন্তান চান। কিন্তু তাঁরা কাঙ্ক্ষিত পরিবার গড়তে পারছেন না। এটাই প্রকৃত সংকট।
সব দেশ মিলিয়ে জরিপে অংশ নেওয়া ৩৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতায় তাঁরা কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় সন্তান নিতে পারেননি। এ হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়, ৫৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম সুইডেনে ১৯ শতাংশ।
অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় সন্তান না নিতে পারার পেছনে জন্মদানে অক্ষমতাকে দায়ী করেছেন ১২ শতাংশ মানুষ। একক দেশ হিসেবে এ হার কয়েকটি দেশে বেশি। যেমন থাইল্যান্ডে ১৯, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫, নাইজেরিয়ায় ১৪ এবং ভারতে ১৩ শতাংশ।
ইউএনএফপির হিসাবে, কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় সন্তান নিতে না পারার পেছনে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার চেয়েও বড় বাধা সময়ের অপর্যাপ্ততা। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা নম্রতার ক্ষেত্রেও এটা খাটে। অফিসে যাতায়াতে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা লাগে তাঁর। বাড়ি ফিরে ভীষণ ক্লান্ত থাকেন। মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। তিনি ও তাঁর স্বামী ঘুমানোর জন্য খুব কমই সময় পান। নম্রতা বলেন, ‘একটি কর্মমুখর দিনের শেষে মা হিসেবে আপনার মনে একটি অপরাধবোধ কাজ করে যে আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে পারছেন না। তাই একটি সন্তানের ওপর পূর্ণ মনোযোগ দিতে চাই।’