সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রত্যন্ত অঞ্চল বিদা জাহিদের অতি পরিচিত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর নাম মোহাম্মদ সালেহ।
প্রবাসের মাটিতে তিলে তিলে বিন্দু থেকে সিন্দুতে পরিণত হয়েছেন এ ব্যবসায়ী। সামাজিক আয়োজন, রাজনৈতিক প্রয়োজন ছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের কল্যাণে সর্বত্রই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত সালেহ'র রাজনৈতিক জীবন নিয়েও নিজ এলাকা চট্টগ্রামে রয়েছে তার বেশ পরিচিতি। তার কাজের প্রশংসা শুধু বিদা জাহিদে সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমিরাত জুড়ে।
ভাগ্য বিধাতা তাকে বিমুখ করে দেখেনি কখনো। যখন যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। বর্তমানে আমিরাতে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আশিক অটো রিপায়রিং ওয়ার্কশপ, আসিফ ক্লাক মেট্টো ওয়ার্কশপ, আবু রেডিয়েটর ওয়ার্কশপ, নাছের আল মজুরী নিউ অটো পার্টস, আবু আসিফ ওল্ড স্পেয়ার পার্টস টেডিং, রাশেল হেলাল মোহাম্মদ রাশেদ স্ক্যারাপ এল.এল.সি ও আল আশিক আপ্রোষ্ট্রি সহ রয়েছে আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। দেশে নিজ এলাকা শিকল বাহা কলেজ বাজারে আবু সালেহ গড়ে তুলেছেন সালেহ সুপার মার্কেট, আশিক ম্যারেজ গার্ডেন, ঘোষাল ফ্যাশন লিমিটেড, চট্টগ্রাম শহরে নতুন চাক্তাইয়ে রয়েছে ঝর্ণা সুপার মার্কেট এবং রেয়াজ উদ্দিন বাজারে রয়েছে সালেহ টাওয়ার।
২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মনোনিত সিআইপির তালিকায় আবু সালেহর নাম সর্ব্বোচ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে তিনি বিদা জাহিদের মদিনা জাহিদ এলাকায় বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাছাড়া আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান পৃষ্টপোষক হিসেবে তিনি গত ১৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদা জাহিদ বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি হিসেবে বিনা প্রতিদন্ধিতায় দায়িত্বে রয়েছেন ১৪ বছর।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আবু সালেহ জানান, 'বিদেশের মাটিতে মরুভূমির চিকচিকে বালি থেকে অনেকে সোনা ফলিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী প্রবসীরা যথাযথ সন্মান মর্যাদা পায়নি। তিনি বলেন, প্রবাসীরা নানাভাবে অবহেলিত। দেশের সম্পদ ক্রয় করে সে সম্পদের কোন নিরাপত্তা পায়না, নেই জীবনের নিরাপত্তা! প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রবাসীদের ব্যাকমেইলিং করার জন্য নানা রকম ফন্দি তৈরি করে। অথচ আমাদের সরকারগুলো সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। সরকারের মনে রাখা উচিত বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছি প্রবাসীরা। সেখানে প্রবাসীদের ব্যাপারে উদাসীনতা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না।'
প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সালেহ আরো জানান, 'বাংলাদেশী শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অত্যন্ত ভাল অবস্থানে ছিল। এখানের পরিবেশ পরিস্থিতি ও ধর্মীয় রীতিনীতি আমাদের সাথে মিল থাকায় আমরা এখানে বসবাস বা কার্যযক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা বন্ধের ব্যাপারটি নিয়ে আমরা অত্যন্ত চিনি্তত। বিশেষ করে আমার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ দিতে না পারায় আমার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বিদেশী শ্রমিক দিয়ে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানে কাজ করানো অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের এ ব্যাপারে আমিরাত সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার আহবান জানান।'
বিদা জাহিদ পরিদর্শনে দেখা যায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানা রকম সহযোগিতার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসকে তার প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ কনসুলার সার্ভিসের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। যেখানে বসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রবাসী বাংলাদেশীদের কনসুলার সার্ভিস দিয়ে থাকেন।
বিদা জাহিদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানান, মোঃ সালেহের উদ্যোগে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য যে কনসুলার সার্ভিসের আয়োজন করা হয়েছে তা প্রবাসীদের অনেক উপকারে এসেছে। মাসে দুই বার কমপক্ষে সাত থেকে আট'শ প্রবাসী বাংলাদেশী এখানে পাসপোর্ট নবায়ন ও নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে থাকেন। মোহাম্মদ সালেহের মতো কষ্টে অর্জিত টাকা দেশ ও দশের জন্য বিলিয়ে দিয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন এটাই সকালের প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আবু সালেহর গ্রামের বাড়ী চট্টগ্রামের পটিয়া থানার শিকলবাহা গ্রামে। মরহুম হাজী মোখলেসুর রহমান ও মরহুমা হাজী মারিয়াম খাতুনের তৃতীয় পুত্র মোহাম্মদ সালেহ। ১৯৬৪ সালে নিজ গ্রামেই তার জন্ম। পড়াশুনা করেছেন পশ্চিম পটিয়া এ.জে.চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ.জে.চৌধুরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, এ.জে. চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ। ছাত্র জীবনে এ.জে.চৌধুরী ডিগ্রী কলেজের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১৪ মার্চ বড়ভাইয়ের হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমান শিল্প উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মোঃ সালেহ। প্রথম তার কর্মজীবন শুরু হয় সালেহ অটো রিপাইরিং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে। তার বড়ভাই মোহাম্মদ হোসেন ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। নিজের কর্মপ্রচেষ্টা, উদ্যম এবং সততার মধ্য দিয়ে তিনি আজ দেশে বিদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের মালিক।
মোঃ সালেহ ১৯৯৪ সালে পটিয়া গিরিনিহারা গ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ইসলাম সওদাগরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২ ছেলে এক মেয়ের জনক মোহাম্মদ সালেহ'র বড়ছেলে আসিফ সালেহ (১৯) আবুধাবী ভার্সিটিতে ও-লেভেলে পড়াশুনা করছেন। ২য় সন্তান মেয়ে নাজিফা সালেহ (১৫) আবুধাবী এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। তৃতীয় ছেলে আশিক সালেহ (১৩) একই স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র।
প্রবাস জীবনে তার সমস্ত অর্জনের পিছনে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসের অনুপ্রেরণা ছিল অন্যতম। গরীব দুঃখীদের কষ্টের কথা ভেবে তিনি এলাকায় এতিম খানা গড়ে তুলেছেন। মায়ের নামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে এলাকার ধর্মভীরু মানুষকে নামাজ আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছেন।