আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রজন্মে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার প্রত্যয়ে প্রবাসী বাঙালিরা মহান শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করছেন। স্মরণকালের ভয়াবহতম শৈত্য প্রবাহ উপেক্ষা করে নিউইয়র্কের বাঙালিরা স্থানীয় সময় অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে সপরিবারে বিভিন্ন শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
জাতিসংঘের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্ণর কর্তৃক ‘একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সর্বস্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের ঘোষণাপত্র হস্তান্তর করা হয়। অঙ্গরাজ্য গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমোর পক্ষে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের ডেপুটি কম্যুনিকেশন ডাইরেক্টর ডিয়ানে ফুট এটি পাঠের পর প্রদান করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেনকে। নিউইয়র্কস্থ মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে এই ঘোষণাটি স্টেট সিনেটে সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়েছে গত ১২ ফেব্রুয়ারি। এরপর অঙ্গরাজ্য গভর্ণর তাতে স্বাক্ষর করেছেন।
জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে স্থাপিত শহীদ মিনারে এ সময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা, কম্যুনিটি এ্যাক্টিভিস্ট সেলিনা মোমেন, বাঙালির চেতনামঞ্চের আবদুর রহিম বাদশা এবং সাখাওয়াত আলী খান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আশরাফুল হাসান বুলবুল প্রমুখ।
গত ২৫ বছর যাবত মুক্তধারা ও বাঙালি চেতনামঞ্চ জাতিসংঘের সামনে শহীদ মিনার নির্মাণ করে মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। এবারও বহুসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে অর্ধ শতাধিক দেশের কূটনীতিকসহ জাতিসংঘের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। স্বাগত ভাষণে ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শোকের প্রতীক, শক্তির প্রতীক, ঐক্যের প্রতীক এবং গৌরবের প্রতীক। যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল ক্রিস্টিনা গ্যালাচ, রাশিয়ার উপস্থায়ী প্রতিনিধি পেত্রে ভ ইলিচেভ, ইউনেস্কো পরিচালক মোওফিদা গুচা এবং ভারতের উপস্থায়ী প্রতিনিধি ভগয়ান্ত শিং ভিশনী দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বক্তারা জ্ঞানচর্চা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় দেশে দেশে মাতৃভাষার চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রভাষা দিবসের পটভূমি তুলে ধরেন।
এদিকে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন মার্কিন কংগ্রেসে ফরেন রিলেশন্স কমিটির প্রভাবশালী সদস্য এবং কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের সদস্যা গ্রেস মেং।
তিনি তার দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘ভাষা, বর্ণ এবং জাতিগত কারণে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক মুসলমান এবং দক্ষিণ এশিয়ান ‘হেইট ক্রাইমের শিকার হয়েছেন। মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান থেকে আমাদের সকলকে সংকল্প গ্রহণ করতে হবে আন্ত:কম্যুনিটিভিত্তিক সম্প্রীতির বন্ধন সংহত করার। বাংলাদেশ সোসাইটির এ অনুষ্ঠানে শতাধিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।
মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কের কুইন্স, ম্যানহাটান, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কসে ১৪টি স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রতিটিতেই একুশের প্রথম প্রহরে হাজারো প্রবাসী শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই একুশের আলোচনা, একুশেভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠের আসর বসে। প্রতিটি কর্মসূচিতেই শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ সকলকে মুগ্ধ করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/মাহবুব