শরীরের রং বাদামী এবং ইংরেজিতে পারদর্শী নই বলে নিজেদের আড়ালে রাখলে চলবে না। বহুজাতিক এ সমাজে নিজের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে সাহসী ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হতে হবে। ইতিমধ্যেই যারা সাহস করেছিলেন, তারা সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন মার্কিন রাজনীতি এবং প্রশাসনে- এমন মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়ান শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ এর ১১ তম বার্ষিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. নীনা আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ানদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। প্রশাসনেও স্থান করে নিয়েছেন অনেকেই। এ অবস্থায় পিছিয়ে থাকার অবকাশ নেই। সাহস করে সম্মুখে এগুতে হবে। এজন্যে দরকার ঐক্যবদ্ধ থাকার। আসাল তেমনি একটি প্ল্যাটফর্মে অবতীর্ণ হয়েছে।
১ ডিসেম্বর শনিবার অপরাহ্নে নিউইয়র্ক সিটিরর গ্রাউন্ড জিরো সংলগ্ন একটি মিলনায়তনের এ সম্মেলনে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয় সাম্প্রতিক মধ্যবর্তী নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে সিনেটর হিসেবে জয়ী বাংলাদেশি-আমেরিকান শেখ রহমানকে।
শেখ রহমান বলেন, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য সিনেটে এই প্রথম একজন বাংলাদেশি তথা দক্ষিণ এশিয়ান জয়ী হলেন। বিজয়ের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে ঐক্যের বন্ধন সংহত করার মধ্য দিয়ে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে আসালের জাতীয় সভাপতি মাফ মিসবাহ উদ্দিন সংগঠনের প্রেক্ষাপট, আদর্শ, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মূলধারার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয়দের অবস্থান আরো শক্তিশালী করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কনভেনশনে বিগত বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন আসালের ন্যাশনাল সেক্রেটারি এম করিম চৌধুরী। তিনি এসময় অ্যাসালের ন্যাশনাল কমিটিসহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আসালের শাখা গঠিত হয়েছে। সকলেই এসেছিলেন এ সম্মেলনে।
‘সাউথ এশিয়ান্স-আওয়ার মুভমেন্টস, আওয়ার স্ট্রেঙ্গথ’- শ্লোগানে উজ্জীবিত দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের অভিবাসীরা এতে অংশ নিলেও বিভিন্ন স্তরের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ছিলেন মূলত: সম্মেলনের প্রাণ-সঞ্চারক। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন আসালের এ কনভেনশন কমিটির চেয়ার ও আসাল ব্রুকলিন চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার।
অনুষ্ঠানে অতিথির মধ্যে আরও ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে মেজরিটি লিডার আন্দ্রেয়া স্টুয়ার্ট-ক্যাসিনস, নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিনজার, ম্যানহাটান বরো প্রেসিডেন্ট গ্যালে এ ব্রুয়ার, ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্ট রুবিন ডিয়াজ জুনিয়র, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড কংগ্রেসম্যান ম্যাক্স রোস, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর রবার্ট জ্যাকসন, স্টেট অ্যাসেম্বলিওমান ক্যাটালিনা ক্রুজ, অ্যাসেম্বলিম্যান (ব্রঙ্কস) মাইকেল এ ব্লেক, অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিন, অ্যাসেম্বলিওম্যান এলিসা এল হান্ডম্যান, অ্যাসেম্বলিওম্যান ল্যাট্রিস ওয়াকার, অ্যাসেম্বলিওম্যান জেমিক উইলিয়ামস, অ্যাসেম্বলিওম্যান ডায়না সি রিচার্ডসন, মুসলিম অ্যাসেম্বলিম্যান চার্লস ডি ফল, সিটি কাউন্সিলম্যান রোরি ল্যান্সম্যান, কাউন্সিলম্যান বেঞ্জামিন কালোস, রিটসি টরেস, কাউন্সিলম্যান ব্যারি গডেনচিক, কাউন্সিলম্যান ডোনোভান জে রিচার্ডস, কাউন্সিলম্যান ম্যাথিও ইগোনে এমডি, কাউন্সিলম্যান জোমানী ডি উইলিয়ামস, কাউন্সিলওম্যান ক্যারলিনা রিভেরা।
কনভেনশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনার ও প্যানেল ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেলিস্টরা আলোচনা শেষে তাদের সুপারিশ পেশ করেন।
এর মধ্যে ‘অর্গানাজিং সাউথ এশিয়ান আমেরিকান উইম্যান-প্রবলেমস উই ফেইস’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ডিস্ট্রিক্ট লিডার (এডি ২৫, পার্ট বি) ড. নীতা জৈন, নিউইয়র্ক সিটি ভোটার এ্যাসিসটেন্স কমিশনার মাজেদা এ উদ্দিন, নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইমিগ্রেশন অ্যাফেয়ার্সের কাউন্সিল ও ডিরেক্টর জেনিফার রাজকুমার কাউন্সিল অ্যাট-লার্জ এটর্নি সোমা সাঈদ। এ প্যানেলে মডারেটর ছিলেন আসাল উইম্যান’স কমিটির চেয়ার সাহনা বেগম এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড চ্যাপ্টার উইম্যান’স কমিটির চেয়ার ফারহানা আহমেদ।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ডাউনস্টেট রিজিওনাল ডাইরেক্টর হেরশ পারেখ, পাবলিক এমপ্লয়ি ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট ওয়েন স্পেন্স, অর্গানাইজেশন অ্যানালিস্টের চেয়ারপারসন রবার্ট জে ক্রোগানসহ মূলধারা ও আসাল’র কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে ‘পাবলিক স্কয়ার : স্পিক ইউর মাইন্ড- ফিল ফ্রি টু ক্রিটিক আসাল’ এর মডারেটরের দায়িত্বে ছিলেন ব্রঙ্কস চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ তাহমিদুল হক।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অ্যাসালের ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কুইন্স চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মনিরুল ইসলাম। সাথে ছিলেন অপর ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরল হক।
শুরুতে শপথ বাক্য পাঠ করান আসাল স্ট্যাটেন আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের ইউথ কমিটির ফাতিন ইসতিয়াক। রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন চ্যাপ্টারস আন্ডার ক্রিডেনশিয়ালস কমিটির চেয়ার মোশাররফ চৌধুরী। অন্যান্য দায়িত্বে ছিলেন আনোয়ার উদ্দিন, অ্যাশলি রাজাকারুনা ও মিশেল ভেল্টজারসহ আসাল এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা