৬ জানুয়ারি বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গরা আক্রমণ করেছিল গণতন্ত্রের পীঠস্থান ক্যাপিটল হিল। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই ট্রাম্প এর পটভূমি তৈরির কাজ শুরু করেছিল। বেশ কয়েকবার সে ঘোষণা করেছিল সে বিজয়ী হবেই। বাইডেন জয়ী হলে তা হবে কারচুপি। পৃথিবীর সব স্বৈরশাসকদের এটাই হলো অমৃত বচন আর গণতন্ত্রমনা সবার কাছে ঘৃণিত বচন। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তার মিথ্যা প্ররোচনা আরও উচ্চমার্গে ধ্বনিত হতে থাকে। যুক্তরাষ্টের ইতিহাসের অন্যতম সুষ্ঠু ও কারচুপিহীন নির্বাচনের ফলাফলকে নস্যাৎ করে ট্রাম্প তার শাসনকে আরও চার বছর দীর্ঘায়িত করার সব রকমের বেআইনি প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। কয়েক হাজারবার মিথ্যা বলে বিশ্ব রেকর্ড ভঙ্গকারী নীতিহীন, দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিবাজ ট্রাম্প চেষ্টা চালায় বিচারিক আদালতে, নির্বাচন বোর্ডে এবং কংগ্রেসে। এমনকি জাস্টিস বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জেফরি রোজেনকে বেআইনি নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায় জনগণের ভোটকে পাল্টে দিতে। কিন্তু রোজেন এই বেআইনি কাজে বাদ সাধল। হায়েনার মতো ক্ষিপ্ত ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করে তার নীতিহীন চামচা জেফরি ক্লার্ককে সেই পদে বসানোর চক্রান্ত করেছিল। জাস্টিস বিভাগের কর্মচারীরা একযোগে পদত্যাগের হুমকি দিল। ভীরু ট্রাম্প লেজ গুটিয়ে নিল সাময়িকভাবে। এই গোপন তথ্য ২৪ জানুয়ারি ফাঁস হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়।
এসব ব্যর্থতার পরও ট্রাম্প থেমে থাকল না। লেলিয়ে দিল অস্ত্রধারী বর্ণবাদী শেতাঙ্গ দুর্বৃত্তদের। এরা উচ্চকণ্ঠে স্লোগান দিচ্ছিল ‘পেন্সের ফাঁসি চাই’। ট্রাম্পের নিজ প্যানেলের মাইক পেন্স আইন অমান্য করে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট এবং নিজকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। প্রতিভাত হচ্ছেঃ পরিকল্পনা ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স, স্পিকার পেলোসি এবং ট্রাম্পের অন্যায় আবদারে অসমর্থকারী কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরদের ফাঁসি দিয়ে ট্রাম্পকে ঘোষণা করবে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে। টুইটার এবং চ্যাটরুমে ৬ জানুয়ারির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডে অব দ্য রোপ’। ক্যাপিটল হিলে নির্মাণ করা হয়েছিল ফাঁসির কাষ্ঠ। কাঠের আড়া থেকে ঝুলানো হয়েছিল গিট্টু দেওয়া ফাঁসির দড়ি। সৌভাগ্য, ক্যাপিটল হিলের আইন রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীর প্রাণপণ চেষ্টায় অভ্যুত্থানকারীদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষ লাইভ টেলিভিশনে দেখতে পায় গণতন্ত্রের প্রতিভ‚ যুক্তরাষ্ট্রের জঘন্যতম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘৃণ্য কাজ কারবার।
পাঠক, এখন আমরা দেখব কারা ওই অস্ত্রধারী দাঙ্গাবাজ। সাদার্ন পভার্টি ল সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজারের মতো রয়েছে মিলিশিয়া অথবা সশস্ত্র সংগঠন। এদের বেশির ভাগই শেতাঙ্গ বর্ণবাদী। এদের নিয়মিত সদস্য হবে ২৫ হাজারের বেশি। এদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও আড়াই লক্ষ্য। ৬ জানুয়ারির অভ্যুত্থানে এরা অংশগ্রহণ করে সংগঠনের ব্যানার নিয়ে। টেলিভিশন ফুটেজে আমরা দেখতে পাই এদের মধ্যে রয়েছে কিউআনন, প্রাউড বয়েজ, পোজি কোমিটিটাস, ওথ কিপারস, থ্রি পারসেনটার্স, কেকেকে এবং অন্যরা। ওদের সঙ্গে ছিল সেনাবাহিনী ব্যবহৃত অ্যাসল্ট রাইফেল, রামদা, বিশাল লাঠি, বর্শা, বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে, প্লাস্টিক হ্যান্ডকাফস, মেটাল পাইপস, মলোটভ ককটেলস, দেয়ালে ওঠার বিশেষ ধরনের দড়ি ইত্যাদি বিবিধ অস্ত্র ও সরঞ্জাম। অনেকের পরনে ছিল বুলেট প্রতিহত করার ভেস্ট। এছাড়াও ওরা বহন করছিল বর্ণবিদ্বেষের চিহ্নখচিত পোস্টার সাইন এমনকি উন্মুক্ত দেহে বর্ণবিদ্বেষী ট্যাটু। সঙ্গে ছিল ১৮৬০ দশকের দেশদ্রোহী বেইমানদের চিহ্ন কনফেডারেট পতাকা। এই পতাকা ছিল দেশদ্রোহীদের যারা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দক্ষিণে এক নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সরকারি আইন হতো ঘৃণ্য দাসত্বের প্রচলিত বিধানকে রক্ষা করা। আরও ছিল হিটলারের জঘন্য স্বস্তিকা। এমনকি এক নরাধম দাঙ্গাকারী পরিধান করেছিল টি-শার্ট যার উপরে লেখা ছিল ক্যাম্প আউশউইটজ (Camp Auschwitz) এই ক্যাম্পের গ্যাস চেম্বারে হিটলার হত্যা করেছিল ১১ লাখ নিরপরাধ ইহুদি এবং অন্য সংখ্যালঘুদের।
এসব নরকের কীটদের লেলিয়ে দিয়েছিল ট্রাম্প। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সংগঠনগুলর সদস্যদের মধ্যে বিপুল সংখ্যায় রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য, পুলিশ, ন্যাশনাল গার্ড, এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যরা। এমনকি রয়েছে কর্মরত সেনা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বহু বছর ধরেই এই ভয়ঙ্কর অস্ত্রধারী সংগঠনগুল চালু ছিল। তবে এদের শক্তি এবং সামর্থ্য ছিল নগণ্য। কিন্তু ট্রাম্পের আশকারা পেয়ে এরা আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষ ছিল ছাইচাপা অঙ্গার। নীতিহীন দুশ্চরিত্র ট্রাম্পের উসকানিতে বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গরা আরব্য রজনীর দৈত্যের মতো সদ্য উন্মুক্ত কলসি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। এরা এক ধরনের বিষাক্ত সরীসৃপ। এই ভুজঙ্গ ছোবল মেরেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে সংহার করতে। ব্যর্থ হয়েছে। এবারের মতো গণতন্ত্র রক্ষা পেল। ভুজঙ্গের এটা ছিল দ্বিতীয় ছোবল। তৃতীয় ছোবল এলে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে কিনা সেটা ভবিষ্যতই সাক্ষ্য দেবে।
বিষধর গোখরার প্রথমবারের ছোবল বুঝতে চলুন প্রায় ৮৭ বছর অতীতে। ১৯৩২ সালের নভেম্বরে এফডিআর হিসেবে বহুল পরিচিত ফ্রেডারিক ডিলানো রুজভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে। পরের বছর মার্চে হয়েছিল অভিষেক অনুষ্ঠান। সময়টা ছিল আমেরিকা এবং শিল্পোন্নত বিশ্বের জন্য ভয়ঙ্কর। ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর কাল বৃহস্পতিবারে (Black Thursday), ওয়াল স্ট্রিটে (Wall Street) স্টক মূল্যে ২২% ধস নেমেছিল। পৃথিবীব্যাপী নেমে আসে মারাত্মক অর্থনেতিক মন্দা। রুজভেল্টের অভিষেক পেরিয়েও ছিল এর ভয়াল ফলশ্রুতি। বেকারত্ব ছিল প্রায় ২৫%। অধিকাংশ ব্যাংক হয়েছিল দেউলিয়া। অন্নাভাবে হাজার হাজার লোক যেত লঙ্গরখানায়। গোটা আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এমনি এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল রুজভেল্ট। প্রথম ১০০ দিনের জন্য রুজভেল্ট গ্রহণ করেছিল উচ্চাকফক্সক্ষী কর্মসূচি। এর পথ ধরে চলে আসে নিউ ডিল। শুরু হয় অবকাঠামো নির্মাণের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ডলারের বিপরীতে স্বর্ণমানকে তুলে দেওয়া হলো। এসবের ফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট মুক্তি পেল আর্থিক মন্দার করাল গ্রাস থেকে। কিন্তু এর আগেই রুজভেল্টের অভিষেকের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় তাকে জোরপূর্বক উৎখাতের ষড়যন্ত্র। পাঠক, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বারথার আন্দোলন। বারাক ওবামার জন্ম যুক্তরাষ্টের অন্তর্গত হাওয়াই স্টেটে। ওবামা কালো বর্ণের বলে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি ট্রাম্প। যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট হতে হলে জন্মগত নাগরিক হতে হবে। ট্রাম্প এবং উগ্র বর্ণবাদীরা প্রচার করে ওবামার জন্ম কেনিয়ায়। অতএব, সংবিধান অনুযায়ী সে প্রেসিডেন্ট হতে পারে না। ঠিক এমনি এক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল রুজভেল্টের বিরুদ্ধে। প্রচার করা হলো সে গোপনে ইহুদি ধর্মের অনুসারী। তখন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের প্রতি ছিল সন্দেহ ও বিদ্বেষ। স্বর্ণমান থেকে সরে আসা, সরাসরি সরকারি সাহায্যে কর্মসংস্থান, এবং অচিরেই সামাজিক নিরাপত্তা (Social Security আইন হতে যাচ্ছে এসবকে প্রচার করা হয় সাম্যবাদ এবং ইহুদিদের চক্রান্ত হিসেবে। ধনিক শ্রেণি ভীত হয়ে পড়ে তাদের পাহাড়চুম্বী সম্পদের স্থায়িত্ব নিয়ে। তারা ক্ষেপে যায় স্বর্ণমানের অপসারণে তাদের সম্পদের মূল্য কমে যাবে মুদ্রাস্ফীতির কারণে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিল। এমনকি তারা প্রথম বিশ্বযুদ্বের দু দুবার উচ্চ পদক প্রাপ্ত মেরিন কোর মেজর জেনারেল স্মেডলি বাটলারকে দলভুক্ত করার চেষ্টা করে। অর্থের জোগান দেয় ধনিক শ্রেণি। কথিত রয়েছে, জে পি মরগানসহ ধনিকরা এমনকি জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশের পিতাও এর সঙ্গে জড়িত ছিল। পরিকল্পনা ছিল: সদ্য সংঘটিত বৈদেশিক যুদ্ধের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক সংস্থা (Veterans of Foreign Wars)কে অভ্যুত্থানে ব্যবহার করা। রুজভেল্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে। ফ্যাসিবাদী সামরিক একনায়কত্ব কায়েম হবে। রুজভেল্টকে রাখা হবে ক্ষমতাহীন পোশাকি প্রেসিডেন্ট হিসেবে। সৌভাগ্য, এই ষড়যন্ত্র অঙ্কুুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। গণতন্ত্র ও সংবিধান অপমৃত্যু থেকে বেঁচে যায়। বিচারে কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদী ভুজঙ্গের প্রথম ব্যর্থ ছোবল। লক্ষ্য করুন, বিচারে কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। তখন আমাদের অনেকেরই জন্ম হয়নি। প্রথম ঘটনার ৮৭ বছর পর ৬ জানুয়ারি আপনারা দেখেছেন ফ্যাসিবাদী ভুজঙ্গের দ্বিতীয় ব্যর্থ ছোবল। ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারেও নামমাত্র বিচার হতে পারে। তবে দলের গলদা চিংড়ি অর্থাৎ গডফাদার সটকে পড়বে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। জাস্টিস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ২৬ জানুয়ারি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, দাঙ্গাকারীদের নাম যদি হতো মোহাম্মদ অথবা ইসলাম তাহলে সাজা হতো ২৫ থেকে ৩০ বছর। আলেকজান্ডার এদিকে আসেনি। ২৩৪৬ বছর আগে গিয়েছিল তৎকালীন সমৃদ্ধ ভারতে সুদূর ম্যাসিডোনিয়া থেকে। হয়তো শ্রদ্ধাভরে বলেছিল, স্যালুকাস বিচিত্র এই দেশ। এখন যদি আসত আমেরিকায়, কৌতুকভরে কী বলত ভবিতব্যই জানেন।
যাকগে, এবার প্রশ্ন হলো: ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী গোখরার তৃতীয় ছোবলের সম্ভাবনা কতটুক? যদি এর উত্তর হয় ইতিবাচক, তাহলে তৃতীয় ছোবলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও সংবিধানের অপমৃত্যু ঘটতে পারে। এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেজন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সাবধান হতে হবে। অভিষেক ভাষণে বলেছে, রাজনৈতিক চরমপন্থি মতবাদ, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ, এবং দেশীয় সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত ও পরাজিত করতে হবে। অভিষেকের পরদিন দাঙ্গাকারীদের সম্পর্কে বাইডেন বলেছেন, এদের প্রতিবাদকারী বলার দুঃসাহস দেখাবে না। এরা হলো দাঙ্গাকারী উচ্ছৃঙ্খল জনতা। অভ্যুত্থানকারী। সন্ত্রাসী।
সিনেট ইন্টেলিজেন্ট কমিটির সবচেয়ে উচ্চস্থানীয় ডেমোক্র্যাটিক দলের সিনেটর মার্ক ওয়ারনার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিদেশি চরমপন্থিদের যোগাযোগে। সিনেটর মার্ক ওয়ারনার বলেছে, দক্ষিণপন্থি বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্রিয়াকাণ্ডের উৎপত্তি স্থান হলো জার্মানি। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয় এটা বিশ্বের সমস্যা। শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদে জার্মানির নাম উঠে এলে, বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে ভয়ঙ্কর ভীতির সঞ্চার ঘটে। এ আশঙ্কা অমূলক নয়। পাঠকবৃন্দ, চলুন আমরা কিছু সময়ের জন্য অদূর অতীতে অবগাহন করি। বছরটি হলো ১৯২৩ সাল। তারিখ হলো ৮ এবং ৯ নভেম্বর। স্থান জার্মানির অন্তর্গত ব্যাভেরিয়ার রাজধানী মিউনিক। অপূর্ব চমৎকার শহর। আমি আমেরিকান এবং ইউরোপীয় ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষা সফর করেছি তিন বছর-অধ্যাপক হিসেবে। এক বছর আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিয়েন্স এবং অস্ট্রিয়ার ইনসব্রূক ইউনিভারসিটির অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর হিসেবে। পারিবারিক প্রমোদ ভ্রমণও করেছি কয়েকবার। প্রতিবারই একটু হলেও থেমেছি বরগারব্রয়কেলারের (Burgerbraukeller) কাছে। শঙ্কায় আমার বুক কেঁপে উঠেছে। এখানেই শুরু হয়েছিল হিটলারের বিয়ার হল পুচ (Beer Hall Putsch) । প্রথম বিশ্বযুদ্বের নামজাদা জার্মান সেনাপতি জেনারেল লুডেনডর্ফের সহায়তায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রথমে ব্যাভেরিয়ার এবং পরে গোটা জার্মানির ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করেছিল নরাধম হিটলার। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল। হিটলার আহত হয়ে চোরের মতো পালিয়ে যায়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে সাজা হয় পাঁচ বছরের। কিন্তু ছাড়া পায় নয় মাস পরে। ভাইমার রিপাবলিকের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ১০ বছরের মধ্যে হিটলার জার্মানির ক্ষমতা লাভ করে। পৃথিবীতে নেমে আসে গভীর অন্ধকার। কয়েক কোটি মানুষ প্রাণ হারায় হিটলারের শুরু করা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এবং হিটলারের গ্যাস চেম্বারে। ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে নিতে হবে সতর্ক এবং শক্তিশালী পদক্ষেপ। বিষাক্ত ভুজঙ্গ অথবা গোখরার বিষদাঁত উপড়ে ফেলে দিতে হবে আইনের যথাযথ অথচ নির্দয় প্রয়োগে। খেয়াল রাখতে হবে কখন আবার গজায়। সম্ভব হলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিষথলিকে নির্মূল করতে হবে চিরতরে।
লেখক: এমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রাক্তন উপ-উপাচার্য -ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিয়েন্স, ডীন এবং প্রাক্তন উপাচার্য-ডেলগাডো কমিউনিটি কলেজ, কমিশনার-রিজিওনাল ট্রানজিট অথরিটি, বিজ্ঞানী, কবি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন