২২ অক্টোবর, ২০২১ ১১:৩৯

শেখ রাসেল দিবসের মাধ্যমে ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিলেন সাদিয়া

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

শেখ রাসেল দিবসের মাধ্যমে ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিলেন সাদিয়া

বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশি এবং ব্রাজিলীয় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব- এর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন পালন করে। করোনা মহামারীর অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিলের ভয়াবহ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের পর এই প্রথম ব্রাসিলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে দূতাবাস কোন জাতীয় দিবস পালন করে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশসহ আরও ৬ দেশে একযোগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে প্রথম নারী হিসেবে অধিষ্ঠিত হলেন নিউইয়র্কের জনপ্রিয় কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। নতুন এ দায়িত্বে তাঁর কর্মদিবস শুরু হলো শহীদ শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে। ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের প্রথম কর্মদিবসেই শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের সুযোগ পেয়ে রাষ্ট্রদূত নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে দাবি করেন।

১৮ অক্টোবর বিকেল পাঁচটায় দূতাবাস প্রাঙ্গনে শুরু হওয়া মূল অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ব্রাসিলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুরা দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’-এর উপর চিত্রাংকন করে। ব্রাসিলিয়া প্রবাসী প্রায় সকল অভিবাসী বাংলাদেশি শিশু চিত্রাংকন পর্বে অংগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে ব্রাজিলে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা অনুষ্ঠানে আগত শিশুদের সাথে নিয়ে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা থেকে শ্লোক এবং বাইবেল থেকে কিছু স্ত্রোত্র পাঠ করা হয়। শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ভিকটিম বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর শহীদ শেখ রাসেলের উপর নির্মিত বেশকিছু আলেখ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। উপস্থিত সুধীবৃন্দ ও শিশু-কিশোররা প্রদর্শিত ভিডিও চিত্রগুলো বিমুগ্ধ চিত্তে অবলোকন করেন।

শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্রাসিলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের অংশগ্রহণে দেশাত্ববোধক কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল আকর্ষণ ছিল ব্রাসিলিয়াস্থ ‘সেন্ত্রো কালচারাল ইসকোলা দু মুন্দু’ শিল্পীগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা “কাপুয়েরা”র বিশেষ পরিবেশনা যা উপস্থিত সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। শেখ রাসেল দিবস-এর প্রতিপাদ্য সামনে রেখে মূলত ব্রাজিলীয় শিশু শিল্পীরা এই পরিবেশনাটিতে অংশ নেয়। 

উল্লেখ্য, ‘কাপুয়েরা’ ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বই আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, লাল সবুজের পতাকা আর দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ। 
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাসের নৃশংসতম ও বর্বরতম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে সাদিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বের ফলে ঐ ঘৃণিত হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পলাতক খুনিদের অবস্থান ও সংশ্লিষ্ট যেকোন তথ্য দূতাবাসকে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে দেশের প্রতি নিজ কর্তব্য পালনের অনুরোধ করে রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সকলকে সদাসতর্ক ও সজাগ থাকার আহবান জানান।  
 
রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে শেখ রাসেল দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ অবলম্বনে শিশুদের আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসা বলেন, আমাদের সন্তানরা শুধু স্বস্বদেশের নয় সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যত কর্ণধার, তাই তাদেরকে অসাম্প্রদায়িকতা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনি নিজ নিজ সন্তানকে বাংলা ভাষা শেখানোর অনুরোধ করেন। সেই সাথে সন্তানদের বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, ১৫ আগষ্ট-এর ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড তথা বাঙালি জাতির সামগ্রিক ইতিহাস জানানোর আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, প্রবাসী এবং অভিবাসী বাংলাদেশীরা আগ্রহী হলে দূতাবাস একটি সাপ্তাহিক বাংলা বিদ্যালয় চালু করার উদ্যোগ নিতে পারে, যেখানে আমাদের শিশুরা বাংলা ভাষা শেখার পাশাপাশি বাংলা গান, কবিতা আবৃত্তি এবং চিত্রাংকন শিখতে পারবে। দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং দূতাবাস পরিবারের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাংলা স্কুলে শিক্ষা প্রদান করবেন।

অনুষ্ঠানের শেষ অংশে রাষ্ট্রদূত চিত্রাংকন ও আবৃত্তি পর্বে অংশ নেয়া সকল শিশু এবং ‘কাপুয়েরা’ শিল্পীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর