ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ এবং একুশের চেতনায় এগিয়ে চলা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির সমর্থনে আন্তর্জাতিক জনমত সুসংহত করার সংকল্পে নিউইয়র্কসহ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে দ্যাগ হ্যামারসজোল্ড পার্কসহ নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্নস্থানে ১৩টি অস্থায়ী শহীদ মিনারে নতুন প্রজন্মসহ প্রবাসীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। কালজয়ী সেই গান ‘আমার ভাইয়ের একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কী ভুলিতে পারি’ গীত হয় প্রতিটি কর্মসূচিতে। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানেও মধ্যরাতে অন্যরকম এক আমেজ তৈরি হয়েছিল ব্যস্ততম এ জনপদে।
জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজার দু’পাশে দুটি শহীদ মিনার নির্মিত হয়। একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের। আরেকটি জেবিবিএর ব্যানারে হলেও মূলত সেখানে বিএনপিপন্থি সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। মহিলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী শহীদ মিনারে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব, বিশ্ববাংলা টোয়েন্টিফোর টিভি, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগ, গোপালগঞ্জ সমিতি, রাজবাড়ি সমিতি, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্টসহ আড়াই ডজন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয় সুশৃঙ্খল পরিবেশে।
এই কর্মসূচির সমন্বয় করেন মমতাজ শাহানা, নুরুজ্জামান সর্দার এবং শাহ শহিদুল হক সাঈদ। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র চ্যাপ্টারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের নেতৃত্বে ফোরামের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণে ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, যুগ্ম সম্পাদক আলিম খান আকাশ, নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ হাসান, শামিম আকতার শরিফ এবং সুলতান আহমেদ। আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে নেতৃত্ব দেন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সেক্রেটারি আবুল কাশেম, যুগ্ম সম্পাদক শাহ ফারুক, কোষাধ্যক্ষ জামান তপন, নির্বাহী সদস্য বিশ্ববাংলা টোয়েন্টিফোর টিভির সিইও আলিম খান আকাশ প্রমুখ। অপরদিকে জেবিবিএর পুষ্পস্তবক অর্পণে নেতৃত্ব দেন গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন জিল্লুর রহমান, যুবদলের নেতৃত্বে ছিলেন জাকির এইচ চৌধুরী এবং আবু সাঈদ আহমেদ প্রমুখ। একুশের প্রথম প্রহরের প্রাক্কালে যুবদলের নেতা-কর্মীরা একটি র্যালির অঅয়োজন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ৭৫টির অধিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কুইন্স প্যালেসে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর সমাগমে সেখানে একুশের চেতনার আলোকে অনুষ্ঠিত শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একুশের গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পীরা। জ্যামাইকায় তাজমহল পার্টি হলে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ডজন তিনেক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
বাংলাদেশের সময়ের সাথে মিলিয়ে জাতিসংঘের সামনে দ্যাগহ্যামারসল্ড পার্কে ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার বেলা ১টায় মুক্তধারা ও বাঙালি চেতনামঞ্চের অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রবাসীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ কর্মসূচির সূচনা ঘটিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম আব্দুল মুহিত।
এদিকে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট ভবনেও নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জালি অর্পণ করা হয় একুশের প্রথম প্রহরে। এ সময় কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে ৫২’র মহান ভাষা শহিদদেও স্মৃতির প্রতি ও ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধেও মধ্যদিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক এক স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল এবং তিনিই প্রথমবারের মত জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর সাথে বাংলাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা জাতি হিসেবে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করেছে। তিনি নিউইয়র্ক শহরে একটি স্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপনের উপর গুরুত্বআরোপ করেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরো সুন্দর ও সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলার আহবান জানান।
বিডি প্রতিদিন/এএ