সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা শর্ত সাপেক্ষে স্বদেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত হলেই ফিরে যেতে তাদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। এছাড়া রাখাইনে নিজের ভিটায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগের অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছেন অনেক রোহিঙ্গা বয়োবৃদ্ধরা।
উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’র খবর নিয়ে উদ্বিগ্ন শরণার্থীরা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ফিরে যাবার প্রক্রিয়া নিয়ে অজানা শঙ্কা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। ফের কি তারা সেই ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে পড়বেন? এ নিয়ে চলছে তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা।
বর্তমানে শৃংখলা ফিরেছে শরণার্থী শিবিরগুলোতে। সরকারের দেয়া জায়গায় সেনাবাহিনীর ত্বত্তাবধানে সবাই নিজ নিজ ব্লকে বসবাস করছেন। সকলেই পাচ্ছেন ত্রাণ। প্রত্যেক শিবিরে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত শিশুদের স্কুল, রয়েছে অস্থায়ী মসজিদও। শরণার্থীরা জানান, বর্তমানে তারা ভালোই আছেন ক্যাম্পে। এ দেশে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
এসময় কথা হয় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকারী দৃষ্টিহীন বয়োবৃদ্ধ আলী হোসেন (৮০) এর সাথে। দেশে ফিরে যেতে চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আক্ষেপ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জীবনের শেষ সময়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আজ আমি পরবাসী। ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি ফিরিয়ে দিয়ে ওরা সুন্দর ভাবে আমাদের গ্রহণ করলে অবশ্যই আমরা ফিরে যাব। ছেলে-মেয়েদের নিজের ভিটায় রেখে মরতে চাই আমি।
ময়নারঘোনা শরণার্থী শিবিরের কথা হয় বৃদ্ধা ফরিদা খাতুনের (৮৫) সাথে। তিনি চার মাস পূর্বে ছেলের কাঁধে চড়ে আশ্রয় নেন এখানে। তিনি বলেন, সুখেই চলছিল আমাদের সংসার। বর্মী সেনাদের তান্ডবে এক ভোরে আমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করি। আমার শরীরের যা অবস্থা, চলতে ফিরেতও অক্ষম আমি। নিজের বাড়িতে জীবিত যেতে পারবো কি না, কে জানে?
কথা হয় রোহিঙ্গা যুবক মো. আবুল বাশারের সাথে। নিজের তাবু’র পাশে ছোট্ট দোকান দিয়েছেন তিনি। তিনি জানালেন, রাখাইনে তার বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো, ছিল কৃষি জমিও। সব কিছু রেখে জীবন নিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, শুনেছি দুই দেশের সরকারের মধ্যে কি যেন চুক্তি হয়েছে। অপেক্ষায় আছি, নিজের দেশে ফিরে যেতে।
বিডি প্রতিদিন/৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হিমেল