সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ট্যুর কাহন

ট্যুর থেকে ফিরে এসে যেই বউকে বলি, দ্যাখো বউ প্রত্যেকটা খাবারের আলাদা আলাদা স্বাদ আছে, থাকা উচিত, ব্যস, লেগে যায় খিটিরমিটির

ইকবাল খন্দকার

ট্যুর কাহন

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ  ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড় ভাইয়ের ফোনে ঘুম ভাংলো। আমি হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞাসা করলাম, কী খবর ভাই? বড় ভাই জানালেন খবর ভালো। আর বললেন- আমাকে নাকি তার জরুরি দরকার। অতএব জরুরি ভিত্তিতে যেন তার বাসায় যাই। আমি বললাম, অবশ্যই আসব ভাই। আপনি ডেকেছেন, আসব না? তবে একটু যদি বলতেন জরুরি দরকারটা কী, তাহলে খুব ভালো হতো। বড় ভাই বললেন, তোকে নিয়ে বসে আমি একটা ট্যুরের পরিকল্পনা করতে চাই। আমেরিকা ট্যুর। বেশ লম্বা ট্যুর। এক মাসের। অবশ্যই ফ্যামিলি ট্যুর। তুই আমাকে বলবি, আমেরিকার কোন কোন জায়গায় যাওয়া যায়। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। আপনি যেভাবে বলবেন, সেভাবেই হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, দুই দিন আগেও না আপনি গলা শুকালেন? পকেট নাকি খালি। বাজার করার টাকাও নেই। এখন সপরিবারে কীভাবে আমেরিকা ট্যুরে যান? তাও এক মাসের জন্য? বড় ভাই বললেন, তুই তো দেখছি বোকাই রয়ে গেলি। আরে বোকা, আমি তো শুধু ট্যুরের পরিকল্পনা করছি। ট্যুরে যাবই, তা তো বলিনি। তার মানে খরচের কোনো ব্যাপার নেই। আর যেহেতু যাব না, যেহেতু কেবল পরিকল্পনা করব, তাহলে ছোটখাটো জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করব কেন? বড় জায়গায় যাওয়ারই পরিকল্পনা করব। কথায় আছে না, স্বপ্নেই যখন খাব, জিলাপি খাব কেন? স্বপ্নে খেলে রসগোল্লাই খাব। আমার এক ছোটভাই বলল, ট্যুর বা ভ্রমণ করলে মন ফ্রেশ থাকে। আর এই ফ্রেশনেসটা সবার জন্যই দরকার। তবে আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, আমার মন পুরোপুরি ফ্রেশ হয় না। অর্ধেকটা ফ্রেশ হয়। আমি অবাক হয়ে বললাম, মানুষের মন আবার অর্ধেকটা ফ্রেশ হয় কীভাবে? ছোটভাই বলল, আসলে হয়েছে কী, মানুষের মন পুরোপুরি ফ্রেশ হয় সশরীরে ট্যুর করলে। আর সশরীরে ট্যুর না করলে ফ্রেশ হয় অর্ধেকটা। আমি বললাম, ট্যুর তো করতে হয় সশরীরেই। শরীর বাসায় রেখে তো আর ট্যুর করা যায় না, নাকি? ছোটভাই বলল, বিষয়টা ঠিক এমন নয়। বিষয়টা হচ্ছে, আমি শুধু ট্যুরের প্ল্যান করি। ট্যুরে যাই না। আর ট্যুরের প্ল্যানে মনের অর্ধেকটা ফ্রেশ হয় বলে আমার ধারণা। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, অনেকেই হয়তো ট্যুরের পরিকল্পনা করেও শেষ পর্যন্ত যান না। তবে ট্যুরে যান, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। আর আমি তাদের মধ্যে একজন। অর্থাৎ আমি নিয়মিতই ট্যুরে যাই। আর নিয়মিত ট্যুরে যাওয়ার ফলে যেটা হচ্ছে, বউয়ের সঙ্গে আমার খিটিরমিটির বেড়েই চলেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, ট্যুরে গেলে বউয়ের সঙ্গে খিটিরমিটির কেন বাড়বে? খিটিরমিটির তো কমার কথা। প্রতিবেশী বললেন, খিটিরমিটির বাড়ে এ জন্য, যেহেতু ট্যুরে গেলে রেস্টুরেন্টে খাওয়া হয়। আর আমি বুঝে ফেলতে পারি মাংস আর মাছের স্বাদ আলাদা। বউ যখন রান্না করে, তখন কোনো কিছুর স্বাদই আলাদা করতে পারি না তো! মনে হয় এঁটেল মাটি খাচ্ছি। তো ট্যুর থেকে ফিরে এসে যেই বউকে বলি, দ্যাখো বউ প্রত্যেকটা খাবারের আলাদা আলাদা স্বাদ আছে, থাকা উচিত, ব্যস, লেগে যায় খিটিরমিটির।

আমার এক বন্ধু বলল, ট্যুর জিনিসটা অবশ্যই বিনোদনের খোরাক। তবে আমার জন্য না। অন্যদের জন্য। যারা আমার আশপাশে থাকে। আমি জানতে চাইলাম, কী রকম? বন্ধু বলল, আমার শরীর স্বাস্থ্যের কী অবস্থা, দেখতেই তো পাচ্ছিস। তো আমি এই শরীর নিয়ে ট্যুরে গিয়ে যখন গোসল করতে পানিতে নামি, তখন সবাই আমাকে দেখে বিনোদন পায় এ জন্য, যেহেতু তারা চিড়িয়াখানায় না গিয়েও জলহস্তি দেখার সুযোগ পাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর