বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একবার তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে চলেছেন ট্রেনে করে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন সুন্দরী। ট্রেনের কামরায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন লোক। বঙ্কিমচন্দ্রের স্ত্রী ঘোমটায় ঢেকে রেখেছেন তাঁর মুখ। বঙ্কিমচন্দ্র ট্রেনে স্ত্রীর পাশে বসে সংবাদপত্রে চোখ বোলাতে বোলাতে সংবাদপত্রের পাতা থেকে চোখ তুলে দেখলেন একজন যুবক আড় চোখে তার স্ত্রীর ঘোমটা ঢাকা মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। ব্যাপারটা দেখে বঙ্কিমচন্দ্র মনে মনে হাসলেন। কিছু বললেন না। খানিক পরে আলাপ জমাতে শুরু করলেন সেই যুবকটির সঙ্গে। জিগ্যেস করলেন, ‘কী করা হয়?’ আচমকা বঙ্কিমচন্দ্রের প্রশ্ন শুনে কিঞ্চিৎ বিচলিত হয়ে যুবকটি উত্তর দিল আজ্ঞে একটা কেরানির চাকরি করি।’ বঙ্কিম আবার জিগ্যেস করলেন, ‘তা মাইনে কত পাও?’
যুবকটি বলল, ‘বেশি নয়, মাত্র ২০ টাকা।’ তখন বঙ্কিমচন্দ্র বললেন, ‘আমি তখন থেকে লক্ষ্য করছি, তুমি এই মহিলার দিকে বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছ! আমি এর ঘোমটা খুলে দিচ্ছি। বরং ভালো করেই দেখে নাও। হ্যাঁ। আর একটা কথা বলি ভালো করে শুনে রাখ, আমি একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং সাহিত্যিক। নাম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ৮০০ টাকা মাইনে পাই। বইপত্র লিখেও ভালো আয় হয়। তা ধরো কর্ম করে সর্ব মিলিয়ে মাসে প্রায় দেড় হাজার ২ হাজার! পুরো টাকাটাই আমি সমর্পণ করেছি এই মহিলাকে। কিন্তু দুঃখের কথা, তবু এর মন আমি পাইনি! আর তুমি কিনা ২০ টাকার কেরানি হয়ে এর মন পেতে চাও! দেড় হাজারকে সরিয়ে! এক কামরা লোকের সামনে বঙ্কিমচন্দ্রের মুখে এমন কথা শুনে যুবকটি লজ্জায় রাঙা হয়ে আর বসে থাকতে পারল না। সে পরের স্টেশনেই চলে গেল অন্য কামরায়।