♦ সুধাকান্ত রায়চৌধুরী নতুন চশমা পরে রবীন্দ্রনাথের কাছে আসেন। কবি তাঁর দিকে এমনভাবে তাকালেন, যেন একজন অপরিচিত মানুষ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে! তারপর কবি মজা করে সুধাকান্তকে জিগ্যেস করলেন, ‘ওহে সুধাকান্ত, কে তোমার চক্ষু পরীক্ষা করেছেন? আর কেই বা তোমার চোখে চশমা দিয়েছেন?’
সুধাকান্ত উত্তর দিলেন, ‘কেন, ডাক্তারবাবু চক্ষু পরীক্ষা করে চশমা দিয়েছেন!’ কবি এবার বললেন, ‘আমি তাদের ধন্যবাদ জানাব, যারা তোমার চোখে চশমা দিয়েছেন।’
সুধাকান্ত জিগ্যেস করলেন, ‘কেন?’
রবীন্দ্রনাথ হেসে উত্তর দিলেন, ‘সুধাকান্ত, তোমার তো চক্ষুলজ্জার বালাই নেই, তবু ওরা তোমার চোখে পর্দা দিয়েছেন।’
♦ বৃদ্ধ বয়সে রবীন্দ্রনাথের একবার চোখের অসুখ হয়। ডাক্তার পরীক্ষা করে ওষুধ দেন। ড্রপার দিয়ে কবির চোখে সেই ওষুধ দিতেন রানী চন্দ। সেই ওষুধে কবির চোখ জ্বালা করত। এর ফলে চোখ দিয়ে জল ঝরত। কবি একদিন রসিকতা করে রানী চন্দকে বললেন, ‘ও আমার চক্ষুদাত্রী, তুমি একেবারে তৈরি হয়ে এসেছ দেখছি! মনে রেখো, ইতিহাসের পাতায় কিন্তু তুমি অমর হয়ে থাকবে।’ রানী চন্দ জিগ্যেস করেন, ‘কীভাবে, গুরুদেব?’ রবীন্দ্রনাথ হেসে বলেন, ‘যখন কেউ আমার জীবনী লিখবে, তখন তুমি দাবি করতে পারবে যে, শুধু একজনই দিনে তিন-চারবার করে রবীন্দ্রনাথের চোখের জল ঝরাতে পেরেছে, সে তুমিই! নয় কি?’ গুরুদেবের এ কথা শুনে রানী চন্দ হেসে ফেললেন।