আমার এক ছোটভাই বললো, আপনি যা-ই বলেন ভাই, কবি-সাহিত্যিকরা কিন্তু সবসময় সত্য কথা বলেন। এই যে দেখেন তারা কী চমৎকার একটা কথা বললেন। কথাটা একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্য। কোন কথাটা জানেন? আমি ডানে-বামে মাথা নাড়লাম। আর বুঝিয়ে দিলাম, কোন কথাটা, সেটা আমি জানি না। এবার ছোট ভাই বললো, না জানার কী আছে? ওই যে ওই কথাটা, ‘সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারও নয়’। আপনি কল্পনা করতে পারবেন না কথাটা কতটা সত্য। আমি বললাম, আমার কল্পনা করার দরকার নেই। আমি এমনিতেই জানি, কথাটা সত্য। এখন কী হয়েছে সেটা বল। অর্থাৎ হঠাৎ এই কথা তোলার কারণ কী? ছোটভাই বললো, না, মানে কদিন ধরে নিজের মশারিটা নিজেকেই টানিয়ে নিতে হচ্ছে আরকি। অতএব বুঝতেই পারছেন, অসময়ে হায় হায় কেউ কারও নয়। মানে আমার পাশে কেউ নেই। থাকলে, নিজের মশারি কেন নিজেকে টানিয়ে নিতে হবে? আমি বললাম, তোর এই ‘অসময়ে’ আসার কারণটা কী? কী করেছিলি? ছোটভাই বললো, না মানে কীভাবে বলি কথাটা! আবার না বললেও চলছে না। আসলে হয়েছে কি, আমি দীর্ঘদিন একটা মেয়ের সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাট মানে মেসেজে কথা বলছিলাম। তারপর একদিন তাকে বললাম সে যেন তার মোবাইল নম্বরটা দেয়। কারণ, আমি তাকে ফোন করতে চাই এবং দেখা করতে চাই কোথাও। অনেক অনুরোধ করার পর সে ফোন নম্বর দিলো। আমি খুশিতে আট-দশখানা হয়ে তাকে ফোন দিলাম। আর অমনি পাশের রুমে স্ত্রীর মোবাইল বেজে উঠলো। বুঝতেই পারছেন, এতদিন ছদ্মবেশে আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে মেসেজে কথা বলছিল! তো বউ যখন বুঝে ফেললো আমি মানুষটা সুবিধার না, সে বাপের বাড়ি চলে গেলো এবং সেই থেকে মশারি আমাকেই টানাতে হচ্ছে। না টানিয়েই বা করবো কী? ডেঙ্গুর সিজন। যদি ডেঙ্গু হয়ে যায়! আমি ভাবলাম, উচিত শিক্ষা হয়েছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আর কিছু বলবো না। নিজের কাজে চলে যাবো। সে আমার সিদ্ধান্ত আঁচ করতে পেরে বললো, দুঃসময় কিন্তু আজীবন থাকে না ভাই। সুসময় আসে। অতএব অবহেলা করবেন না। আমি বললাম, অবহেলার কিছু নেই। নিজের দোষে যদি দুঃসময় আসে, সেটার যন্ত্রণাও নিজেকেই ভোগ করতে হবে। ছোটভাই বললো, এত ভারী ভারী কথা বলে লাভ নেই ভাই। জীবনে দুঃসময় আসতেই পারে। আর দুধের মাছিরা সরে যেতেই পারে। তবে বুদ্ধিমান হলে খুব বেশি যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। আমি বললাম, কী রকম? ছোটভাই বললো, কী রকম, সেটা আমি নিজেও জানি না। কিছু একটা বলতে হবে, তাই বললাম। আমি এবার মুখ তিতা বানিয়ে বললাম, মানুষ হ। আর মানুষ হলে কেউ না কেউ পাশে থাকবেই। ছোটভাই বললো, এমনিতেও পাশে থাকে ভাই। শর্ত হচ্ছে, বাসের যাত্রী হতে হবে। তাহলে হবে কী, কেউ না কেউ পাশে থাকবেই। কারণ, বাসের সিট ফাঁকা থাকে না। পাশে কাউকে না কাউকে পাওয়া যায়ই যায়। আমি বললাম, আমি কী বলেছি আর তুই কী অর্থ তুললি?
ছোটভাই বললো, খুব খারাপ কোনো অর্থ তুলেছি কি? হতে পারে। যেহেতু অর্থই অনর্থের মূল। আমি এবার ধমক মারলাম। বললাম অপ্রাসঙ্গিক কথা যেন না বলে। ছোটভাই বললো, ঠিক আছে, বললাম না অপ্রাসঙ্গিক কথা। আপনি শুধু আমাকে এটা বলেন, সুসময়ের বন্ধু চেনার উপায় কী। আমি বললাম, আগে তোর সুসময় আসুক, তখন বলবো। ছোটভাই আমার কথায় কী বুঝলো বা কী মনে করলো জানি না। সে সেই কবিতাটা আওড়াতে আওড়াতে হাঁটা দিলো- সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয়... আমি পেছন থেকে বললাম- ‘বটে’ মানে বটগাছ না, জানিস নিশ্চয়!