আমার এক বড় ভাই বললেন, তোর ভাবির সঙ্গে একটা সমঝোতায় যাওয়া উচিত বলে মনে করছি। অন্তত আগামী কয়েক দিনের জন্য। কারণ, পরিস্থিতি ভালো না। আমি বললাম, এটা কেন? না মানে একটু যদি বুঝিয়ে বলেন আরকি। বড় ভাই বললেন, আমি যে ছাতাটা ব্যবহার করি, সেটা লম্বায় প্রায় দুই হাত। এত বড় হওয়ার কারণে যখন তখন সেটা সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারি না। অস্বস্তি লাগে। কিন্তু বৃষ্টি তো আর এসব অস্বস্তি বোঝে না। যখন তখন নেমে পড়ে। আর সঙ্গে ছাতা না থাকার কারণে আমি ভিজতে ভিজতে কাকের লেভেলে চলে যাই। এই জন্য তোর ভাবির সঙ্গে একটা সমঝোতায় যাওয়াটা অতি জরুরি মনে করছি। আমি বললাম, এখানে ভাবির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টা কেন আসছে? না মানে এখানে ভাবিকে কেন টেনে আনছেন? ভাই বললেন, কেন টেনে আনব না? আমার ছাতাটা দৈর্ঘ্যে হাত দুয়েক হলেও তোর ভাবিরটা ছোটখাটো। যেটা সহজেই ব্যাগে নিয়ে বের হওয়া যায়। তো তার সঙ্গে সমঝোতা হলে তার ছাতাটা নেওয়া যাবে, ব্যাগে নিয়ে বের হওয়া যাবে, হুটহাট বৃষ্টির আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে। আমি এবার বিরক্তি প্রকাশ করলাম। বললাম, এমন সাধারণ একটা বিষয়কে কেউ এভাবে প্যাঁচায়? কথাটা তো আরও সহজেও বলা যেত। বড় ভাই বললেন, বৃষ্টির জ¦ালাতনের কারণে এখন আর মাথা ঠিক নেই। যে কারণে সহজ বিষয়ও জটিল লাগে। গতকাল কী হয়েছে শোন। শার্ট-প্যান্ট-কোট পরে ফুলবাবু সেজে বাইরে বের হয়েছি, হঠাৎ নামল বৃষ্টি। আমি দৌড় দিয়ে এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে পারলাম বটে, তবে জায়গাটা বেশি সুবিধার ছিল না। বৃষ্টির পানির ছিঁটা এসে প্যান্ট ভিজিয়ে দিচ্ছিল। এজন্য ভাবলাম প্যান্টের নিচের অংশটা ভাঁজ করি। তারপর ভাঁজ করার জন্য যেই নিচু হলাম, গলার ঝুলন্ত টাই লেগে গেল মাটিতে। মাটি তো না, কাদাযুক্ত মাটিতে। ঘটনার এখানেই শেষ না। আরেকজন বৃষ্টির তাড়া খেয়ে যেই দৌড়ে এলো, পাড়া দিয়ে বসলো আমার টাইয়ে। উপুড় হয়ে পড়ার দশা! আমি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে বললাম, হুট হাট বৃষ্টি তাহলে আপনাকে ভালোই যন্ত্রণা দিচ্ছে। আপনি এক কাজ করতে পারেন। সঙ্গে রেইনকোট রাখতে পারেন। এই জিনিসটা ব্যাগে রাখা খুব সুবিধা। বড় ভাই বললেন, ঠিক আছে তোর কথা। কিন্তু শুধু ব্যাগে রাখা সুবিধা হলেই তো চলবে না। অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধাও দেখতে হবে। একবার আমি একটা রেইনকোট পরেছিলাম। সবাই তখন জিজ্ঞেস করতে লাগল, আমার পিঠে এত লম্বা চুল কেন। মাথায় চুল নেই, পিঠে চুল, ব্যাপারটা তো প্রশ্ন করার মতোই। আমি বললাম, তা তো অবশ্যই। বড় ভাই বললেন, আসলে হয়েছে কী, সেদিন হুটহাট বৃষ্টি আসার কারণে হুড়মুড়িয়ে রেইনকোটটা পরেছিলাম। তারপর হুডিটা যখন মাথায় দিলাম, কীভাবে কীভাবে যেন টান লেগে গেল। ব্যস, মাথার পরচুলাটা খুলে পিঠে আটকে গেল। আমি বললাম, আপনার জন্য তো দেখছি রেইনকোটও বিপজ্জনক। সবচেয়ে ভালো হয় হেলমেট নিয়ে ঘুরলে। সবাই আপনাকে বাইকার ভাববে। আসলে আপনি যে বৃষ্টির হাত থেকে মাথা বাঁচানোর জন্য এই জিনিস নিয়ে ঘুরছেন, সেটা কেউ বুঝতে পারবে না। বড় ভাই এবার একটা অযৌক্তিক প্রশ্ন করলেন, আমার তো শুধু মাথা ভিজলেই সর্দি লাগে না, হাত-পা ভিজলেও সর্দি লাগে। আচ্ছা, মাথার হেলমেট পাওয়া যায়, হাত-পায়ের হেলমেট পাওয়া যায় না?
ভাইয়ের এই প্রশ্ন শোনার পর থেকে আমি প্রায়ই পুরান ঢাকার লোহা-লক্কড়ের দোকানে যাই। খুঁজি হাত পায়ের হেলমেট পাওয়া যায় কি না।