আমার এক বড় ভাই বললেন, আজকাল মানুষের স্মরণশক্তি কমে গেছে। একটু আগে কী বলেছে, একটু পরেই সেটা মনে রাখতে পারে না। মোটকথা একটু আগের কথার সাথে একটু পরের কথার কোনো মিল নেই। কী যে একটা অবস্থা! আমি বললাম, আপনার ধারণা সঠিক না ভাই। মানুষের স্মরণশক্তি কমেনি। বরং বেড়েছে। কী বেড়েছে? জিহ্বার জোর বেড়েছে। জিহ্বার এই জোরকে কাজে লাগিয়ে তারা কথা বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে। আর যে কথাগুলো বলে যাচ্ছে, সেগুলো কিন্তু কোনো কাজের কথা না। জাস্ট কথার কথা। বড় ভাই বললেন, এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায় কী? আদৌ কি উপায় আছে? আমি বললাম, অবশ্যই উপায় আছে। একটু খরচা করতে হবে আরকি। মানে কিছু খাওয়াতে হবে। এই ধরেন বড় বড় রসগোল্লা বা এই মানের অন্যকিছু। বড় ভাই অবাক হয়ে বললেন, এইগুলো খাওয়ালেই মানুষ আর কথার কথা বলবে না? আমি বললাম, হয়তো বলবে। তবে কম। সহনীয় মাত্রায়। বোঝেন না কেন, মুখের ভেতর বড় একটা রসগোল্লা থাকলে কথা বলা যায়? কথা বলতে সমস্যা হয় না? এই যে আমি আপনার সাথে এতগুলো কথা বললাম, কেন বললাম? কারণ, আমার মুখে রসগোল্লা বা বার্গার বা এই জাতীয় অন্য কোনো খাবার নেই। যদি থাকতো, তাহলে কিন্তু বলতে পারতাম না। এই জন্য চলেন কিছু একটা কিনে দেবেন। যেহেতু আপনি অতিরিক্ত কথা পছন্দ করেন না, তাই আমিও বলতে চাই না। চলেন, আধা কেজির মতো রসগোল্লা কিনে দিলেই হবে। বড় ভাই ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন। তাই বাধ্য হলেন রসগোল্লা কিনে দিতে। অতঃপর বললেন, কী জামানা এলো! মানুষের কথা বন্ধ করার জন্যও টাকা খরচ করতে হয়! আমি কয়েকখানা রসগোল্লা গলাধঃকরণ করে বললাম, আমার মতো চুনোপুঁটিদের মুখ বা কথার কথা বন্ধ করতে পারবেন সামান্য খরচ করলেই। কিন্তু রাঘববোয়ালদের কথার কথা বলার অভ্যাস বন্ধ করা কিন্তু দুষ্কর। মুখে রসগোল্লা কেন, গামছা গুঁজে দিলেও তারা কথা বলতেই থাকবে। আমরা বলি না কথা কম কাজ বেশি? তারা এটা বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে, কথা বেশি কাজ কম। বড় ভাই বললেন, এটি এখন জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ লোকজন যাতে শুধু কথার কথা না বলে, যাতে বুঝে শুনে কথা বলে, এর জন্য কী করা যায়? আমি বললাম, ওষুধ একটা আছে। এটাকে ঠিক ওষুধ না বলে মহৌষধ বলা যেতে পারে। বড় ভাই এবার মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন, মহৌষধটা কী? আমি বললাম, কেউ যখন কথার কথা বলে আপনার সময় নষ্ট করতে চাইবে, তখন শুধু আস্তে করে বলে দিবেন, আপনার কথা কিন্তু রেকর্ড হচ্ছে। ব্যস, দেখবেন তার জিহ্বা আটকে যাচ্ছে। মোটকথা রেকর্ড হওয়ার কথা শোনার পর ওই লোক কোনোভাবেই ভুয়া কথা বলার সাহস দেখাবে না। যা বলবে, বুঝে বলবে। নয়তো মুখে তালা লাগাবে। বড় ভাই এবার আমার কানের কাছে মুখ এনে হালকা ভয়ে ভয়ে বললেন, তোর সাথে এখন যেসব কথা হলো, সেগুলো আবার রেকর্ড হয়নি তো? আমি বললাম, ঠিক জানি না। পকেটে একটা রেকর্ডার ছিল। চেক করলে বলতে পারবো ঠিকঠাক রেকর্ড হয়েছে কি না। বড় ভাইয়ের কানের পাশে এবার ঘামের চিকন ধারা দেখা গেলো।
আমি বললাম, যারা কথার কথা বলে, তাদেরকে হালকা শাস্তির আওতায়ও আনা যেতে পারে। বড় ভাই বললেন, কী শাস্তি? আমি বললাম, তারা কথা শুরু করলেই পকেট থেকে মোবাইল বের করতে হবে। বড় ভাই বললেন, তারপর রেকর্ড করতে হবে, এই তো? আমি বললাম, আরে না। গেম খেলা শুরু করতে হবে। আপনি মোবাইলে জম্পেশ গেম খেলতে থাকবেন। ওই বেডা একা একা কথা বললে আর কতক্ষণই বা বলতে পারবে। লজ্জা না থাকুক, ক্লান্তি বলে তো একটা জিনিস আছে, নাকি?
এ কথা শুনে আমি পকেট থেকে মোবাইল বের করে গেম খেলতে শুরু করলাম। দেখা যাক, ফালতু কথা বন্ধের এ ওষুধ কাজ করে নাকি!