বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর হাতেই স্থাপিত স্বাস্থ্য খাতের মূলস্তম্ভ

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

বঙ্গবন্ধুর হাতেই স্থাপিত স্বাস্থ্য খাতের মূলস্তম্ভ

স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি বলা হয়। তিনি শুধু স্বপ্নস্রষ্টা ছিলেন না, ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা ও ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা। স্বাধীনতার পরপরই তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, কপর্দকহীন দেশ গঠনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন এবং ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশে তখন খাদ্য নেই, অর্থ নেই, ব্যাংক রিজার্ভ শূন্য, বিপর্যস্ত অর্থনীতি সেই সঙ্গে রাস্তাঘাট, রেলপথসহ সব যোগাযোগের মাধ্যম এবং অবকাঠামোতে শুধু ধ্বংস আর ধ্বংসের চিহ্ন। প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং পুলিশ-সেনাবাহিনী তখনো পুরোপুরি পুনর্গঠিত হয়নি। এরকম একটা ভঙ্গুর এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার মাঝে দেশ গঠনের দায়িত্ব নিয়েই বঙ্গবন্ধু ব্যাপকভাবে জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। আজীবন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলার খেটে খাওয়া, গরিব-দুঃখীসহ সর্বস্তরের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি এমন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং সুখী-সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে পাঁচটি মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা যাবে। আর এই মৌলিক অধিকারগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং নীতিমালা প্রণয়নে সচেষ্ট হন। পাঁচটি মৌলিক অধিকারের অন্যতম স্বাস্থ্যসেবাকে তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন এবং তা বাস্তবায়নে সুপরিকল্পিতভাবে কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র আমানত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ১০ (ক)-এ চিকিৎসাকে মৌলিক অধিকার এবং ১৮(১)-এ জনগণের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যকে রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে ব্যক্ত করেন। তিনি তার আন্তরিকতা, বিচক্ষণতা এবং দূরদর্শিতা দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জনগণের চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করা অবশ্যই জরুরি। বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যচিন্তা ছিল অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত, যুগোপযোগী, আধুনিক এবং জনকল্যাণমুখী। সত্যি বলতে কি, তারই চিন্তাপ্রসূত নীতিমালা এবং পরিকল্পনায় আজকের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গোড়াপত্তন বা ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে একটি শক্ত নীতিমালা, পরিকল্পনা ও শক্ত অবকাঠামো রেখে গেছেন, যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আজকের বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভিত্তি।

বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রাম বাংলার আবহে, প্রান্তিক জনগণের মাঝেই। তার সারা জীবনের রাজনীতি ছিল গরিব-দুঃখী, খেটে খাওয়া ও মেহনতি মানুষের জন্য। সুখে-দুখে দেশের প্রতিটি মানুষের কল্যাণে নিজেকে ব্যাপৃত রাখাই ছিল তার সারা জীবনের অন্যতম সাধনা ও উদ্দেশ্য। স্বভাবতই বঙ্গবন্ধু সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন গ্রামবাংলার উন্নয়ন ও কৃষির বিকাশকে। সঙ্গে সঙ্গে তার আজন্ম স্বপ্ন ছিল, দেশের প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় এবং প্রান্তিক জনগণের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনা শুধু রাজধানী বা শহর কেন্দ্রিক ছিল না। বরং জেলা, থানা, ইউনিয়ন এবং গ্রামসহ তৃণমূল পর্যায়ে সেই সুযোগ নিশ্চিত করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। দেশের কোনো মানুষ যেন চিকিৎসার আওতার বাইরে না থাকে, এমনকি কাউকে যেন অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, থানা হেলথ কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুবিন্যস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রণয়নের পথ দেখিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার উত্তরসূরি এবং সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই পূর্ণতা পায় এই কমিউনিটি ক্লিনিক ভিত্তিক চিকিৎসাসেবা, যা বর্তমানে প্রান্তিক জনগণের ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসার প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে স্বীকৃত এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। আজ বিশ্বের দরবারে এ কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা একটি রোল মডেল।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে থানা পর্যায়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই দুর্বল। সেখানে একদিকে যেমন ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব ছিল, তেমনি সার্বিক অবকাঠামো ছিল খুবই নড়বড়ে। বঙ্গবন্ধুই এসবের উন্নতিকল্পে থানা হেলথ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রায় প্রতিটি থানায় স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭২ সালে সব জেলায় পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ছিল না, এমনকি দেশে সর্বসাকুল্যে হাসপাতাল ছিল মাত্র ৬৭টির মতো। এ অবস্থায় তিনি প্রতি জেলায় একটি করে জেলা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ প্রতিটি জেলায় হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। একই সময়ে তিনি চিকিৎসক সংকট মোকাবিলায় দ্রুততম সময়ে তৎকালীন মিটফোর্ড হাসপাতালকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরিণত করেন এবং প্রথম ব্যাচেই ১৫০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ভর্তি নিশ্চিত করেন। 

তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের এমবিবিএস পরবর্তী উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না, এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না। তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডন বা বিদেশের অন্য কোনো দেশে যেতে হতো। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সে সুযোগও বন্ধ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দেশেই উচ্চপ্রশিক্ষিত ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই তৎকালীন ‘শাহবাগ হোটেল’কে ‘আইপিজিএম অ্যান্ড আর’ বা ‘পিজি হাসপাতালে’ রূপান্তরিত করেন। এ প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই পূর্ণাঙ্গ এবং দেশের সর্বপ্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আজকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের জুন মাসে অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলেজ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)-কে প্রতিষ্ঠা করেন, যা ‘ব্রিটেনের রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস’-এর আদলে গড়ে তোলা। মেডিকেল উচ্চশিক্ষার এই দুটি বিদ্যাপীঠ থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য চিকিৎসক বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে দেশের জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর মেডিকেল ছাত্রদের পাশাপাশি প্যারামেডিকেল এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধুর সময়েই শুরু হয়েছিল। এভাবে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য গবেষণা এবং অবকাঠামোর যে অনন্য সাধারণ উৎকর্ষ জাতির জনকের পদক্ষেপে সাধিত হয়েছিল, তা অনস্বীকার্য এবং চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

স্বাধীনতার পরপরই অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা সেবার জন্য বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদেশ পাঠান। তাছাড়া দেশে অবস্থানরত অসংখ্য যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের যথাযথ সুচিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন বা নিটোর-যা বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত। আহতদের দেশেই চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য তিনি বিখ্যাত আমেরিকান অর্থোপেডিক সার্জন ডা. গ্রাস্ট তাঁর স্ত্রী ডা. মেরিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান। তাদের নেতৃত্বেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা হয়। দেশি ডাক্তাররা যাতে এই চিকিৎসার হাল ধরতে পারেন, সে লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানের অধীনেই দেশে সর্বপ্রথম এম.এস ও ডি.অর্থো নামক উচ্চতর কোর্স ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেন। আহত রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি নিশ্চিত করতে তিনি ১৯৭২ সালে উচ্চতর কোর্স ও চিকিৎসা সেবা চালু করেছিলেন। একই সময়ে অর্থোপেডিক সার্জারির পাশাপাশি প্লাস্টিক সার্জারি এবং পুড়ে যাওয়া রোগীদের সেবার জন্য প্লাস্টিক সার্জারিরও কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময়ের সেই বিচক্ষণ উদ্যোগের পরিপূর্ণ ফলই আজকের ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি’। এ ছাড়া তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিশেষায়িত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং দেশের তৎকালীন একমাত্র কলেরা হাসপাতালকে আইসিডিডিআরবি হিসেবে রূপান্তরিত করেন। শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের দিকেও বঙ্গবন্ধুর সজাগ দৃষ্টি ছিল। আর এই লক্ষ্যেই তিনি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে তিনি মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে শিশুস্বাস্থ্য ও মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য অসংখ্য শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তাছাড়া জমি প্রদান করার মাধ্যমে বারডেম হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গোড়াপত্তন করেন, যা বর্তমানে সুনামের সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু ধোলাইখালে এক বিশাল জনসভায় ঘোষণা দেন যদি বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হয় তিনি ন্যাশনাল হাসপাতালকে বাঁচাবেন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রতি বছর ন্যাশনাল হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণার প্রচলন, মান নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল বা বিএমআরসি প্রতিষ্ঠা করেন।

আবার দেশের সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেন। ভবিষ্যতে জনবিস্ফোরণের বিষয়টি উপলব্ধি করে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবং সে লক্ষ্যে তিনি পরিবার পরিকল্পনা বোর্ডকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর স্থাপন করেন এবং তখন থেকেই এই বিভাগের অধীনে ডাক্তার নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৪ সালে ‘জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান’ এবং এরই ধারাবাহিকতায় ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ’ গঠিত হয় তার নির্দেশনায়। ক্ষতিকর, অপ্রয়োজনীয় ও বেশি দামি ওষুধ আমদানি বন্ধ এবং ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন।

আবার ডাক্তারদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুই তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা থেকে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা প্রদান করেন। শুধু ডাক্তার নয়, তিনি নার্সদেরও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে নার্সদের প্রতি যে কোনো প্রকার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান। নার্সিং সেবার সুযোগ ও মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও নানামুখী পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই হয়েছিল।

জাতির পিতার স্বাস্থ্য ভাবনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল জনগণের সার্বিক কল্যাণ। তিনি চেয়েছিলেন প্রচুর ডাক্তার হবে, ডাক্তাররা মর্যাদাবান হবে, তাদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত হবে, আর এই ডাক্তাররাই সর্বস্তরের জনগণকে সেবা দেবে। রাষ্ট্র সব নাগরিকের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, আর এর জন্যই তিনি এক সুবিন্যস্ত বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এঁকেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের স্বাস্থ্যখাতকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত করে যেতে পারেননি। জাতির পিতা দেশকে নিয়ে যে চিন্তা করতেন, তারই সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনে আত্মনিয়োগ করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম স্বপ্নের স্বাস্থ্যসেবার সফল এবং সার্থকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বাস্তবভিত্তিক ও ব্যাপক কার্যক্রম দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে এবং আগামীতে একটি পূর্ণাঙ্গ, সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে, এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

 

লেখক : ইউজিসি অধ্যাপক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

সর্বশেষ খবর