বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘চ্যাম্পিয়ন’ রোনালদোকে দেখল জুভেন্টাস

রাশেদুর রহমান

‘চ্যাম্পিয়ন’ রোনালদোকে দেখল জুভেন্টাস

অ্যাটলেটিকোর গোলরক্ষক ওবল্যাক রোনালদোর দুরন্ত হেড রুখে দিয়ে নিজেকে গর্বিত ভাবছিলেন হয়তবা। কিন্তু রেফারি গোললাইন প্রযুক্তির সাহায্যে রোনালদোর দ্বিতীয় হেডটাকেও গোল দিলেন। প্রথম গোলটাও হেডেই করেছিলেন রোনালদো। জুভেন্টাস ২-০ গোলে এগিয়ে গেল। জুভেস্টাস স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেছে সমর্থকরা। রোনালদো দুই হাত নেড়ে নেড়ে গ্যালারিতে উত্তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এরপরের কাজটাও রোনালদোই করলেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে কাক্সিক্ষত জয় উপহার দিলেন জুভেন্টাসকে। সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অ্যাটলেটিকো নামের গলার কাঁটা ছুড়ে ফেলল ওল্ড লেডিরা। আর জুভেন্টাস সমর্থকরা নতুন করে চিনল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। ভিন্ন অর্থে বলতে গেলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তিনিই তো রিয়াল মাদ্রিদের গত টানা তিনটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের নায়ক! সেই রোনালদো রিয়াল ছেড়ে আসার পর রিয়াল মাদ্রিদ শেষ ষোলোর বাধাটাও অতিক্রম করতে পারল না। তাও আয়াক্সের মতো সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েও! সেই অর্থে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘চ্যাম্পিয়ন’ রোনালদো এখনো আপন গৌরব নিয়ে টিকে আছেন। প্রথম লেগে ২-০ গোলে হারার পর রোনালদোর বিদায়টাকে যারা নিশ্চিত বলে ধরে নিয়েছিলেন তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন পর্তুগিজ তারকা। এখনো যে ফুরিয়ে যাননি তারও দৃষ্টান্ত দিলেন। রোনালদো কোমর বেঁধেই মাঠে নেমেছিলেন। জিততেই হবে। কারও কোনো পরওয়া নেই। দিয়েগো সিমিওনের দলের বিপক্ষে কোনো ইতালিয়ান ক্লাব গোল করতে পারে না (২০১৪ সালে এসি মিলানের হয়ে কাকার গোলটা ছাড়া)। সাধারণ এই অতীতটা ভুলে গেলেন রোনালদো। প্রথম লেগে ২-০ গোলে জিতলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে সাধারণত তারাই পরের রাউন্ড খেলে। রোনালদো এই পরিসংখ্যানটাও ভুলে গেলেন। পাশার দান উল্টে দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন। সতীর্থদের দিয়ে হবে কি না, তাও ভেবে দেখলেন না। গোলের তীব্র ক্ষুধা নিয়ে মাঠে নামলেন। হ্যাটট্রিক করেই তার সেই ক্ষুধা মিটল। জুভেন্টাসের জার্সিতে রোনালদোকে প্রথম হ্যাটট্রিক করতে দেখে দর্শকরা নিশ্চয়ই তাকে রিয়ালের রোনালদো বলে চিনতে ভুল করেননি! ইতালিয়ান ক্লাবে আসার পর থেকে রোনালদো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খুব একটা ভালো পারফর্ম করতে পারেননি। অনেকেই বলতে লাগল, রিয়াল মাদ্রিদকেই সব দিয়ে এসেছেন রোনালদো। কিন্তু রোনালদো যে স্থান-কাল আর পাত্রের বহু ঊর্ধ্বে ওঠে ফুটবলটা খেলতে পারেন তার প্রমাণ দিলেন দুর্দান্ত এই সময়োপযোগী হ্যাটট্রিকে। আর ম্যাচটা জিতে হাসতে হাসতেই বললেন, ‘দেখ, জুভেন্টাস কিন্তু এই কারণেই আমাকে দলে নিয়েছে।’ ঠিকই বলেছেন পর্তুগিজ তারকা। এই ধরনের চাপ সামলে দলকে জয় উপহার দেওয়ার সামর্থ্য কেবল রোনালদোদেরই থাকে। পর্তুগিজ তারকাকে খেলতে দেখে জুভেন্টাস কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো আল্লেগ্রি এক বাক্যে বলে ওঠলেন, ‘রোনালদো সত্যিই দুর্দান্ত ফুটবল খেলে।’ অবশ্য বাকিদের অবদানকেও অস্বীকার করেননি তিনি। মারিও মানজুকিচ, কিয়েল্লিনিদের অবদানও তো কম নয় এই ‘কামব্যাক’ ম্যাচে! রোনালদো চলতি মৌসুমে ইতালিয়ান সিরিএ লিগে করেছেন ১৯ গোল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে করলেন ৪ গোল। মৌসুমের এখনো বেশ খানিকটা সময় বাকি। আরও একবার এই পর্তুগিজ তারকা ফিফার বর্ষসেরা এবং ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে পেছনে ফেলতে পারেন অন্যদের। কেবল তাই নয়, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দারুণ একটা ম্যাচ খেলে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাক্সক্ষাটাও জানিয়ে দিলেন রোনালদো। এই টুর্নামেন্টটা তিনি যেন নিজের করে নিতে চলেছেন! ম্যানইউ ও রিয়ালের জার্সিতে এরই মধ্যে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন রোনালদো। এরই মধ্যে তিনি সবাইকে পেছনে ফেলেছেন। দেখা যাক, এই রেকর্ডটা আর কতদূর নিয়ে যান পর্তুগিজ তারকা!

সর্বশেষ খবর