প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। সংসদ বিলুপ্তি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করবে। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন হবে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ কবে ঘোষণা হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে। কেননা সরকার পরিবর্তন ঘটলে ক্রীড়া ফেডারেশনেও রদবদল হয়। যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের সমর্থিত সংগঠকরা মূলত ফেডারেশনের দায়িত্ব নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে এ দলের সমর্থিত সংগঠকরা দায়িত্বে থাকতে পারবেন কি না? নাকি এখনই নতুন কমিটি গঠন হবে। বেশি করে আলোচনাটা হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘিরে। দুই বড় ফেডারেশন ঘিরে আলোচনাটা স্বাভাবিক। দুই ফেডারেশনকে নিয়ে এখনই নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, কে হবেন নতুন সভাপতি বা কমিটিতে কারা থাকবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
হকি, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, আর্চারি ফেডারেশনেরও গুরুত্ব কম নয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) গুরুত্ব অনেক। তবে বিসিবি ও বাফুফের মতো কেউ গুরুত্ব পায় না। প্রধানমন্ত্রী সোমবার পদত্যাগ করেন। গতকাল সংসদ ভেঙে দেয়। অথচ এরই মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকার থাকা অবস্থায় যারা বিসিবির দায়িত্বে ছিলেন তাদের অনেকে গতকাল মিরপুর বিসিবি কার্যালয়ে সামনে ব্যানার প্রতিবাদী ভাষা লিখে উপস্থিত হন। তাদের দাবি ছিল, যোগ্য সংগঠকদের দিয়ে বিসিবি চালাতে হবে।
বিসিবির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া সংগঠকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিসিবিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।’ ১৫ বছর ধরে বাফুফে কমিটির বাইরে থাকা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ফুটবল ফেডারেশনে দুর্নীতির শেষ ছিল না। বড় বড় কর্মকর্তারা অর্থ লোপাট করে ভাগ্য বদল করেছেন। অবিলম্বে এদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এখনই তারা সভাপতির পদ থেকে কাজী সালাউদ্দিনকে সরানোর দাবি তুলেছেন।
সন্দেহ নেই বিসিবি বা বাফুফেতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। মূলত রাজনৈতিক পরিচয়ে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয় কর্মকর্তাদের। স্বচ্ছভাবে পরিচালিত না হওয়ায় দেশের ফুটবলে দৈন্যদশা নেমে এসেছে। জাতীয় দলের মান একেবারে নিচে নেমে গেছে। তবে কিছু নিবেদিত সংগঠকদের কারণে ঘরোয়া আসরের চাকা সচল রয়েছে। বড় দুই ফেডারেশনে একনায়কতন্ত্র চলছিল এ নিয়ে সংশয় নেই। তারপরও কী বড় দুই ফেডারেশনে দ্রুত বিলুপ্ত করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গড়া সম্ভব?
অন্য কোনো ফেডারেশনে না হলেও বিসিবি ও বাফুফে দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ভাঙন সম্ভব নয়। এখানে সরকারও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিসিবির নির্বাচন হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ও বাফুফের নির্বাচন হয় ফিফার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। এখানে বাধা দিলেও আইসিসি ও ফিফার শাস্তি বাধ্যতামূলক। ২০০১ সালে বাফুফের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দেওয়ায় কী পরিণত হয়েছিল তা তো দায়িত্বশীল মহলের ঠিকই জানা। দুই ফেডারেশনের কমিটি পরিবর্তন হতে পারে নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে তার আগে যদি সভাপতি পদত্যাগ বা দেশত্যাগ করেন তাহলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রেও আবার আইসিসি কিংবা ফিফার গাইড লাইন মানতে হয়।