একবারও বিরক্ত হননি। ১৬ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হাসিমুখে। কখনো পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন। অথচ বিরক্ত হতেই পারতেন। কাল মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনটি ছিল তাইজুল ইসলামের। রেকর্ড গড়ার দিন ছিল বাঁ-হাতি স্পিনারের। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ২০০ উইকেটের ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম রেকর্ডটি গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে ৪৮ টেস্টে ২০১ উইকেট নেওয়া তাইজুলকে উত্তর দিতে হয়েছে সাকিব-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের। এক সময় অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলকে বারবার উত্তর দিতে হতো কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নকে নিয়ে। বলা হতো ওয়ার্নের সময় না হলে ম্যাকগিল হতেন কিংবদন্তি লেগ স্পিনার। একই প্রশ্ন শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের বেলায়ও। অসাধারণ একজন বাঁ-হাতি স্পিনার হওয়ার পরও শুধু মুরালিধরনের জন্য আরও বেশি টেস্ট খেলতে পারেননি। বিশেন সিং বেদীর জন্য যেমন ৩৩টির বেশি টেস্ট খেলতে পারেননি দিলিপ দোশী। তাইজুল ৪৮ টেস্ট খেলেছেন। সাকিব খেলেছেন ৭১ টেস্ট। দুজনেই বাঁ-হাতি স্পিনার। তাইজুল একজন স্পেশালিস্ট টেস্ট স্পিনার সাকিবের জন্য একাদশে সুযোগ পাননি। বেশি সুযোগ পাননি বলে হতাশ নন। ক্যারিয়ারে যতটা টেস্ট খেলেছেন, তাতেই সন্তুষ্ট ২০০ ক্লাবে নাম লেখানো তাইজুল, ‘সাকিব ভাই ছাড়া আমি খেলিনি তা তো না। উনি থাকাকালেও অনেক ম্যাচ খেলেছি। সাকিব ভাই ছাড়াও খেলেছি। নিউজিল্যান্ডে যখন টেস্ট জিতেছি সাকিব ভাই ছিলেন না। আমাদের এখানে যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছি তখনো সাকিব ভাই ছিলেন না। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। আপনি তো একজনকে ৫০ বছর খেলাতে পারবেন না। সাকিব ভাইয়ের আড়ালে থাকব কেন? আমাদের দেশে সত্যি বলতে অনেক কিছুই মুখে মুখে। অনেকেই আছে খারাপ করেও ট্রল হতে হতে স্টার হয়ে গেছে। আবার অনেকে ভালো করেও স্টার হতে পারেনি। বঞ্চিতের কিছু নেই। বিশ্বে অনেকে বড় খেলোয়াড় ছিলেন, অন্যরা খেলার সময়-সুযোগ কম পেত। মুরালিধরনের সময় হেরাথ খেলতে পারেননি। হেরাথ অনেক উইকেট পেয়েছেন।’
টাইগার দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ২০০ উইকেট নিতে ভালো বোধ করছেন তাইজুল, ‘অনুভূতি অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। বিশ্বে অনেক বোলারই আছেন ২০০-৩০০-৪০০ উইকেট নিয়ে। বাংলাদেশে আমরা এতদিন টেস্ট খেলি না। তাও যে দু-একজন আছি, আমিও একজন। গর্বের বিষয় না, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ দিয়েছে তাই হয়েছে।’ ৪০০ উইকেট প্রাপ্তির বিষয়ে বলেন, ‘আগে দেখতে হবে ৫ বছরে কয়টা টেস্ট আছে, তার পর একটা হিসাব করে উত্তর দিতে পারব। টেস্ট যদি থাকে ১০টা তাহলে তো কঠিন!’
তাইজুল গতকাল খেলতে নামেন ৪৭ টেস্টে ১৯৬ উইকেট নিয়ে। অথচ তিনি রেকর্ডটি এর আগেই করতে পারতেন। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান সিরিজে খেলা হয়নি তার। গতকাল বোলিং শাসিত দিনের সেরা নায়ক ছিলেন তাইজুল। বাংলাদেশ ১০৬ রানে অলআউট হয়েছে। প্রোটিয়ারা দিন পার করেছে ৬ উইকেটে ১৪০ রান তুলে। কোনো পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস নেই। সেখানে তাইজুল ৫ উইকেট নিয়ে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন। দিনের সেরা পারফরমার নিঃসন্দেহে তাইজুল। টাইগার ব্যাটারদের ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতার পুরোটাই ঢেকে দিয়েছেন তাইজুল। তিন স্পেলে বোলিং করা তাইজুলের বোলিং দিনের স্পেল ১৫-২-৪৯-৫! নাজমুল বাহিনী যখন ব্যাটিং ব্যর্থতার সমালোচনায় জর্জরিত, তখন সতীর্থ সবার ছাতা হয়ে আগলে রেখেছেন। দুর্দান্ত বোলিং করে দলকে একাই ফিরিয়েছেন ম্যাচে। টার্ন, আর্মার ও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে সফরকারীদের আটকে রেখেছেন। আজ স্বপ্ন দেখছেন অল্প রানে বেঁধে দলকে ম্যাচে ফেরাতে, ‘যদি আগামীকাল (আজ) ১৬০-১৮০ রানে অলআউট করতে পারি দক্ষিণ আফ্রিকাকে, তাহলে আমরা ম্যাচে ফিরব।’
ওয়ার্নের সঙ্গে ম্যাকগিল, মুরালিধরনের সঙ্গে হেরাথ এবং বেদীর সঙ্গে দোশীর ক্রীড়া বিশ্লেষকরা সবসময় তুলনা করেছেন। এটা গতকাল স্বীকারও করেছেন। সবাই গ্রেট বোলার। সবাই পারফরমার। তার পরও তুল্যমূল্যের বিচার হয়েছে। গতকাল তাইজুলকেও সাকিবের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দুজনেই বাঁ-হাতি স্পিনার। তার পরও প্রশ্ন করা হয়েছে দুজনের বোলিংয়ের মূল পার্থক্য কোথায়? উত্তরে অনেক প্যাঁচিয়ে তাইজুল বলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের যেহেতু অনেক ভ্যারিয়েশন ছিল, সাকিব ভাই বেশি বল করেছে। পার্থক্য অবশ্যই আছে একটা। আমি অনেক সময় ধরে বল করতে পারি। আমাকে যদি বলে টানা ১৫-২০ ওভার করতে, আমি করতে পারব। এরকম কিছু ব্যাপার থাকে।’