এশিয়া কাপ শুরু ১৯৮৪ সালে। এশিয়ার ক্রিকেট মহাযজ্ঞে ভারত ও পাকিস্তানের প্রথম লড়াই ওই বছরই। ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওই ম্যাচের আয়োজক ছিল আবার বাংলাদেশ। ওয়াসিম আকরাম, আবদুল কাদির, সেলিম মালিক, ইজাজ আহমেদ, কপিল দেব, মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, মহিন্দার অমরনাথ, দিলীপ ভেংসরকার ও কৃষ্ণচামারী শ্রীকান্তদের দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে সেকি উন্মাদনা। ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে সেই ম্যাচের সেকি আবেদন! এর পর বাংলাদেশের মাটিতে আরও অনেকবার খেলেছে দুই দল। কিন্তু ২৬ বছর আগের সেই উন্মাদনা, আবেদন যেন নেই। কোথায় যেন কমতি রয়েছে, কিসের যেন ঘাটতি রয়েছে। তার পরও বিশ্বের দুই ক্রিকেট পরাক্রমশালী দলের খেলা, সে নিয়ে বাড়তি আবেদন থাকবে। থাকাই স্বাভাবিক। আজ থাকছেও সেটা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরের বিপক্ষে নামছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। এশিয়া কাপে দুই দলের ১১ নম্বর ম্যাচ এবং সব মিলিয়ে ১২৬ নম্বর।
ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রীড়াঙ্গন, সংস্কৃতি_ সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের অবস্থান পুরোপুরি বিপরীত। দুই দেশই পরস্পরের প্রবল প্রতিপক্ষ। বিশেষ করে খেলাধুলায় এক দেশ, আরেক দেশের যেন জাত শত্রু। দুই দেশ যখনই ক্রিকেট খেলছে পরস্পরের বিপক্ষে, তখনই ক্রিকেটবিশ্বে জন্ম নিচ্ছে সূক্ষ্ম এক বিভাজনের। যা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়। বোঝা যায় দুই দলের সমর্থকদের অবস্থান। আগের মতো না হলেও আজকের ম্যাচ নিয়ে অবশ্য এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও সৃষ্টি হবে সূক্ষ্ম বিভাজন। বিভাজনের পরও ক্রিকেটপ্রেমীরা চাইবেন টানটান উত্তেজনার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে আত্দবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকে। মরুদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে জিতে এসেছে ওয়ানডে সিরিজ। সব মিলিয়ে তুঙ্গে আত্দবিশ্বাস। আত্দবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা পাকিস্তান কিন্তু আসরের প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় শ্রীলঙ্কার কাছে। ওই হারে শঙ্কার সৃষ্টি ফাইনাল খেলার। যদিও পরের ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফিরেছে জয়ের ধারায়। আজ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে যদি জিততে পারে, তাহলে ৮ মার্চের ফাইনাল খেলাটা অনেকটাই নিশ্চিত করে নিবে পাকিস্তান।
একই অবস্থা ভারতেরও। ফাইনাল খেলতে জয়ের বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা নেই বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের। এশিয়া কাপে বিরাট কোহলিরা খেলতে এসেছিলেন টানা হারের ধাক্কা নিয়ে। স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা হারের ধাক্কা সামলে নিয়েছিল ভারত কোহলির সেঞ্চুরিতে। ওই ম্যাচে টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিকে ম্লান করে দিয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু পরের ম্যাচেই হোঁচট। হেরে যায় শ্রীলঙ্কার কাছে। হেরে যায় কুমার সাঙ্গাকারার কাছে।
আজ দুই দলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের আড়ালে রয়েছে বেশকিছু দ্বৈরথ। ভারতীয় দলের মূল ব্যাটসম্যান অধিনায়ক কোহলিকে আজ লড়তে হবে উমর গুল, জুনায়েদ খান, সাঈদ আজমল, মোহাম্মদ হাফিজ, শহীদ আফ্রিদির বিপক্ষে। শেখর ধাওয়ানকে লড়তে হবে গুলের সুইং, জুনায়েদের বাউন্সের বিপক্ষে। অন্যদিকে হাফিজ, আফ্রিদি, উমর আকমলদের লড়তে হবে মোহাম্মদ সামি, রবীচন্দন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজার গতি, সুইং ও স্পিনের বিপক্ষে। তবে আজকের ম্যাচে দুই দল তাকিয়ে আছে কোহলি ও আকমলের ব্যাটের দিকে। আগের দুই ম্যাচেই দুই তারকার ব্যাট থেকে বেরিয়েছে রান। দুজনই করেছেন সেঞ্চুরি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১০২ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৭ রান করেছিলেন উমর আকমল। কোহলি বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩৬ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন ৪৮। সুতরাং দুই তারকাই আজ দুই দলের ভরসা। তবে আজকের ম্যাচে মানসিকভাবে এগিয়ে আছে ভারত। গত আসরে দুই দলের লড়াইয়ে কোহলির অতিমানবীয় ১৮৩ রানের ইনিংসে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত।
দুই দলে তারকার অভাব নেই সত্যি। তার পরও দুই দলের ম্যাচ বলে বাড়তি আবেদন থাকছে আসরে। আজ সেই আবেদন নিয়েই মিরপুরে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ধারা। ফতুল্লায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়েই শেষ হয়েছে আসরের প্রথম ধারা।