ধক ধক করছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর প্রায় ৭০ হাজার দর্শকের মন। পিন-পতন নীরবতা চারদিকে। এমন সময় ঘটল ভাগ্যদেবীর আগমন। তিনি বর দিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। পুরো ম্যাচে অনুজ্জ্বল পর্তুগিজ তারকা কি কারুকার্যময় গোলটাই না করলেন। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার আকর্ষণীয় পাস ছিল মনোহারি। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলটা! হালকা লাফিয়ে উঠে বলের স্পর্শ পেতেই 'ব্যাক হিলে' বল জড়াল প্রতিপক্ষের জালে। এর জন্য নতুন বিশেষণ খুঁজতে হবে। ভ্যালেন্সিয়ার গোলরক্ষক দিয়েগো আলভেস পুরো ম্যাচেই 'রোনালদো' বন্যার মুখে বাধ দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এবার ব্যর্থ হলেন আলভেস। তার অগোচরেই নিশ্চিত জয়টা ছিনতাই করলেন রোনালদো ম্যাচের অতিরিক্ত মিনিটে। তার দুর্দান্ত গোলটা রিয়াল মাদ্রিদকে জয় উপহার দিতে পারেনি। তবে ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলের ড্র এনে দিয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা বের করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এ ড্র লা লিগার শিরোপা জয়ের পথটাও খোলা রাখল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য।
একদিনের ব্যবধানে লা লিগায় কি ওলটপালটই না হয়ে গেল। শনিবার বার্সেলোনা ২-২ গোলে ড্র করেছিল গেটাফের সঙ্গে। সেই ড্রয়ের পর এমনকি জাভি পর্যন্ত বলে দিয়েছিলেন, এবার কোনো মিরাকলই কেবল বার্সেলোনাকে শিরোপা এনে দিতে পারে। সেই মিরাকলটাই কি ঘটল রবিবার! অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ লেভেন্তের মাঠে ২-০ গোলের পরাজয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদ ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে করল ২-২ ব্যবধানে ড্র। এই তিনটা ঘটনা লা লিগায় এনে দিয়েছে শেষ দিনের রোমাঞ্চ। ৩৬ ম্যাচে ৮৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে শীর্ষে রয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। সমান ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে দ্বিতীয় স্থানে বার্সেলোনা। ৩৫ ম্যাচে ৮৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তৃতীয় স্থানে রিয়াল মাদ্রিদ।
সমীকরণটা বেশ জটিল। লা লিগা এমন জটিল সমীকরণে পড়েছে খুব কমই। মৌসুমের শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়েও তিনটা দল দিব্যি লড়ে যাচ্ছে শিরোপার জন্য। শিরোপার জয়ের সম্ভাবনা অবশ্য সবচেয়ে বেশি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের। সামনের দুই ম্যাচ জিতলেই দেড় যুগ পর শিরোপার স্বাদ নিতে পারবে তারা। তবে অ্যাটলেটিকোর শেষ ম্যাচটা বার্সেলোনার সঙ্গে। কাতালানরা শেষ ম্যাচটা জিতে গেলে রিয়ালের সামনে সুযোগ আসবে শিরোপা জয়ের। শর্ত হলো, রিয়ালকে হাতে থাকা তিনটা ম্যাচেই জয় পেতে হবে। অন্যদিকে বার্সেলোনা যদি হাতে থাকা দুই ম্যাচ জিতে যায় এবং রিয়াল যদি কোনো ম্যাচে পয়েন্ট হারায়, তবে শিরোপা জিতবে কাতালানরা! রবিবার রিয়াল মাদ্রিদ হারতেও পারতো। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়াকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জেরেমি ম্যাথু। ৫৯ মিনিটে দুর্দান্ত হেডে এই গোল শোধ করেন সার্জিও রামোস। তবে ৬৫ মিনিটেই প্যারেজোর গোলে আবার এগিয়ে যায় ভ্যালেন্সিয়া। এই গোল শোধ করার জন্য রিয়ালকে অপেক্ষা করতে হয় শেষ মিনিট পর্যন্ত। ৯৩ মিনিটে রোনালদোর গোলের পর পরই রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজান। এই ম্যাচ হেরে গেলে রিয়াল মাদ্রিদের ট্রিবল জয়ের স্বপ্নটা চূড়ান্তভাবেই ভেঙে যেত। রিয়াল মাদ্রিদের ড্রয়ের পর কোচ কার্লো আনসেলত্তি একটা অদ্ভূত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে অতি মনোযোগী হয়ে খেলতে গিয়ে নাকি তার শিষ্যরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদের এই ক্লান্তি ২৪ মে'র ফাইনালের আগে কাটবে তো!