শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন

অব্যবস্থাপনা গাজীপুরে দুর্ভোগ ঢাকায়

সড়কে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের আউটলেট পথ বন্ধ রয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই পানি বিপরীত দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।

আফজাল, টঙ্গী

অব্যবস্থাপনা গাজীপুরে দুর্ভোগ ঢাকায়

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে জনদুর্র্ভোগ চরমে উঠেছে। টঙ্গী-গাজীপুর এলাকার অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ ছড়িয়েছে ঢাকা পর্যন্ত - বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার টঙ্গী-গাজীপুর ছাড়িয়ে দুর্ভোগ বিস্তৃত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় সারা দিনই টঙ্গী থেকে বনানী পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট লাগছে। উত্তরা আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০-২৫ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ধীর গতি ও নির্মাণ কাজের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে একদিকে যানজট অন্যদিকে বৃষ্টির পানিতে জলজট লেগে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি ও দুর্দশা কত ভয়াবহ ও বিপজ্জনক তা সরেজমিনে গিয়ে না দেখলে বোঝা মুশকিল। চলতি মাসের মধ্যে আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তা আসলেই শেষ হবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সড়কে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলাকালে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের আউটলেট পথ বন্ধ রয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই পানি বিপরীত দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর জয়দেবপুর চৌরাস্তা বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ধীরগতি আর খোঁড়াখুঁড়ি অপরদিকে বৃষ্টির পানি জমে সড়কে খানাখন্দে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়তই সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। বেহাল অবস্থায় থাকা এই মহাসড়কে প্রায়ই যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, কার, অটো, মালবাহী লরি, ট্রাক সড়কচ্যুত হয়ে সড়কের পাশে গর্তে পড়ে যায়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে নগরবাসী প্রতিদিন সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। টঙ্গী-গাজীপুরের এই অব্যবস্থাপনায় কিছুদিন ধরে যানজটের দুর্ভোগে পড়ছেন বনানী, উত্তরা, আবদুল্লাহপুরের বাসিন্দারা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। একই চিত্র টঙ্গী কালিগঞ্জ সড়কেও। যানজটের জন্য এলাকাবাসী ট্রাফিক পুলিশ এবং বিআরটি প্রকল্পকে দায়ী করছে। মহাসড়কের টঙ্গী স্টেশনরোড, চেরাগআলী, কলেজগেট, সফিউদ্দিন সরকার কলেজের সামনে, হোসেন মার্কেট, গাজীপুরা, ভোগড়া বাইপাসসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের কারণে সড়ক ও ফুটপাথ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে পথচারীরা স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ যে গতিতে চলছে তা কবে নাগাদ শেষ হবে কেউ বলতে পারছে না।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ বলেন, বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকে। প্রকল্পের কাজটি দ্রততম সময়ের মধ্যে শেষ করা উচিত। এ ছাড়া মহাসড়কের টঙ্গী এলাকায় অনেক জায়গায় এখনো কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো যথাসময়ে শেষ না হলে জনসাধারণের ভোগান্তি আরও বাড়বে। দুই বছর আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পটি। নানা জটিলতায় এ পর্যন্ত তিন বার সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের কাজে শুরু থেকেই রাস্তা কাটাকাটির ভোগান্তি চলে। প্রকল্পটি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত অংশের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ইলিয়াস শাহ। মাঝখানে আবদুল্লাহপুর থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত চার কিলোমিটার ব্রিজের অংশটুকুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, কিছু জটিলতা ছিল। এখন সব জটিলতা কেটে গেছে। আগামী এক বছরের মধ্যেই আমার অংশের কাজ শেষ করা যাবে। বাকি অংশের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ইলিয়াস শাহ বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে টঙ্গীতে ও ভোগড়া বাইপাসের পরে কিছু জায়গায় কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলোও অতিদ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বর্ষা মৌসুম শেষে শুরু হবে। মহাসড়কের যেসব স্থানে ড্রেন পরিষ্কার নেই আমরা সেগুলো পরিষ্কার করছি এবং গাজীপুর সিটির করপোরেশনকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সবটাই হবে চার লেনের রাস্তা। গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছোট ছোট ৭টি ফ্লাইওভার থাকবে। বর্তমানে এই ফ্লাইওভারগুলোর কাজই চলছে।

এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক বলেন, যানজট এড়িয়ে গণপরিবহনে চলার ভালো উপায় হলো বিআরটি। এ প্রকল্পে এত সময় লাগছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকায় একের পর এক অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করে বিআরটির জায়গা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। খণ্ডিত বিআরটি কতটা সুফল দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

সর্বশেষ খবর