কুমিল্লা নগরীর সুপেয় পানীয়জলের উৎস ছিল রানির দিঘি। এই দিঘির পশ্চিম পাড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, বাকি তিন পাড়ে রয়েছে বসতি। দিঘিরপাড়ে মিলত নির্মল বাতাস। সেই দিঘিটি দীর্ঘদিন শুষ্ক অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে জন্মেছে গাছ। ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাগলের পাল।
ইতিহাসবিদ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা নগরীর প্রাণ কেন্দ্র কান্দিরপাড়-সংলগ্ন স্থানে ১৬৬৯-১৬৭৫ সালের মধ্যে দিঘিটি খনন করা হয়। এটি খনন করেন ত্রিপুরার রানি জাহ্নবী দেবী। এটি ছিল নগরীর সুপেয় পানীয়জলের উৎস। কিন্তু প্লাস্টিক আর আবর্জনায় হারিয়ে যাচ্ছে দিঘি। দীর্ঘদিন ধরে শুষ্ক অবস্থায় পড়ে আছে দিঘি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রানির দিঘির বুকজুড়ে ঘাসের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা গোচারণভূমি নাকি দিঘি। সেখানে চরছে ছাগলের পাল। কয়েকজন ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের গবাদি পশুর জন্য।
নগরীর প্রবীণ বাসিন্দা প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, রানির দিঘিকে খালি দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই। সংস্কার করে এটিকে তার আগের রূপে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, নগরীর প্রাচীন দিঘিগুলোর অন্যতম ধর্মসাগর দিঘি ও নানুয়ার দিঘি। এগুলো ১৪৫৮ সালে খনন হয়। ত্রিপুরার রানি জাহ্নবী দেবী প্রজাদের পানীয়জলের জন্য ১৬৬৯-১৬৭৫ সালের মধ্যে রানির দিঘিটি খনন করেন। আমাদের প্রত্যাশা, এই ঐতিহাসিক দিঘিটি যতেœ থাকুক, টলটলে জলে পরিপূর্ণ থাকুক। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবুল বাসার ভুঞা বলেন, এই দিঘির সঙ্গে কয়েক প্রজন্মের শৈশব জড়িয়ে রয়েছে। এখানে কত সাঁতার কেটেছি। দিঘিটির ভিক্টোরিয়া কলেজ-সংলগ্ন পাড়ে সংস্কার কাজ বাকি রয়েছে। এই দিঘির সঙ্গে কলেজের একটি মেলবন্ধন রয়েছে। দিঘিতে অনেক মাটি জমেছে। অনুমতি পেলে আমরা মাটি তুলে কলেজের খেলার মাঠ সংস্কার করতে পারতাম। তাহলে দিঘিটি আরও গভীর হবে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, রানির দিঘির পাড়ের কিছু সংস্কার কাজ চলছে। সামনে বর্ষাকাল। এমনিতেই এটি পানিতে ভর্তি হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমরা পাম্প চালিয়েও পানি দিতে পারব।