চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের বাসা-বাড়ি থেকে ১৭ শতাংশ কর আদায় করে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ গৃহকর, ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণ এবং ৩ শতাংশ সড়কের বিদ্যুতায়ন। কিন্তু এখন চসিক নতুন নীতিমালা করে বেসরকারি উদ্যোগে বর্জ্য সংগ্রহের তোড়জোড় শুরু করেছে। এ কাজে প্রতিটি বাসাকে দিতে হবে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে নগরবাসীকে বর্জ্য অপসারণে টাকা দিতে হবে দুবার। বাড়বে নতুন খরচ। সঙ্গে বর্জ্য অপসারণ নিয়ে তৈরি হবে নৈরাজ্য।
বর্তমানে নগরে আবাসিক হোল্ডিং সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার। জানা যায়, চসিক প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহ সেবা প্রদানকারী (পিসিএসপি) প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধনের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ৪১ ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য অপসারণের জন্য ১৯২টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে ২৪ ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন। নিয়ম মতে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অতীত অভিজ্ঞতা, পর্যাপ্ত জনবল এবং রিকশা-ভ্যান, হাতগাড়ি, ইঞ্জিন ট্রলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি থাকতে হবে। অভিযোগ আছে, ইতোমধ্যে দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্জ্য অপসারণ কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। নেই পর্যাপ্ত জনবল ও যানবাহন। চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী বলেন, নগরবাসী ১৭ শতাংশ করের মধ্যে ৭ শতাংশ বর্জ্য অপসারণের। এটি আইনেই বলা আছে। এখন আবার নতুন করে টাকা নির্ধারণ করলে তা হবে অন্যায়। নগরবাসী চসিকের এ একপেশে সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। এ প্রক্রিয়ার বাতিল চায়। অন্যথায় আমরা নগরবাসীকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিষ্ঠান চসিকের অনুমোদন ছাড়াই ইচ্ছামতো টাকা নিয়ে বর্জ্য অপসারণ করছে। এমনকি মসজিদ-মাদরাসা থেকেও ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাই কোর্টে রিটও করেছে। আমরা চাই এ নৈরাজ্য বন্ধ করতে। একটা নীতিমালার মাধ্যমে প্রতি বাসা থেকে ৫০-৭০ টাকা নিয়ে বর্জ্য অপসারণ করবে। তিনি বলেন, নগরবাসী বর্জ্য অপসারণে যে ৭ শতাংশ কর দেয়, তা দিয়ে নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ টাকা দিয়ে বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয় না। নতুন নিয়মে প্রতিটি কোম্পানিকে শ্রমিকের বেতন, গাড়ির সংখ্যা ও এলাকা অনুযায়ী সক্ষমতা যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে। তারাই বাসা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে। অন্যদিকে, চসিকের নিজস্ব যানবাহন ও ইকুইপমেন্টের সংকট প্রকট। অনেক যন্ত্রপাতি ২০-২৫ বছরের পুরোনো। স্কেভেটর বা চেইন ডোজার ভাড়া করে ময়লা সরাতে হয়। নাগরিকদের সেবায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, নগরে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ২৬৯ টন সংগ্রহ করে চসিক। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আছে নগরে দুটি ল্যান্ডফিল্ড। এ দুটি সম্মিলিত আয়তন প্রায় ৩৪.৫ একর। পরিচ্ছন্নতায় ব্যবহৃত যানবাহন ও যন্ত্রপাতি আছে ২২৪টি।