সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কটির দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। স্বল্প দৈর্ঘ্যরে এ মহাসড়ক সিলেটের ব্যবসাবাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভোলাগঞ্জ দিয়ে আমদানি করা পাথর, চুনাপাথর, কয়লা এ মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয়। বিভিন্ন কোয়ারির বালু-পাথর পরিবহনেও ব্যবহার হয় মহাসড়কটি। আর সাদাপাথর কিংবা উৎমাছড়া পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণেও এ মহাসড়ক দিয়ে যেতে হয় পর্যটকদের। সম্প্রতি মহাসড়কটি হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। রাত হলেই মহাসড়কজুড়ে ফাঁদ পেতে রাখে ডাকাতদল। বিভিন্ন সেতু ও কালভার্টে রশি বেঁধে এবং স্থানে স্থানে ইট ও পাথর ফেলে তৈরি করা হয় ফাঁদ। সেই ফাঁদে আটকা পড়ে যানবাহন। এরপর ডাকাতদল সর্বস্ব লুটে নিয়ে পানিপথে পালিয়ে যায়। ডাকাতের এরকম ফাঁদে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে পাথরবাহী ট্রাক, পর্যটকদের প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই হাওরের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এ মহাসড়কে ডাকাতি বেড়ে যায়। ডাকাতরা ডাকাতি করে পানিপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে পালিয়ে যায়। গত কয়েক মাসে মহাসড়কটিতে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাত হলেই মহাসড়কের হাইটেক পার্ক থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত অংশে ডাকাতরা ফাঁদ পেতে রাখে। এর মধ্যে হাইটেক পার্ক থেকে কোম্পানীগঞ্জ হাবির দোকান অংশের মধ্যকার ৬টি সেতুর উভয় পাশে রশি বেঁধে রাখে ডাকাতরা। যখনই কোনো মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা সেতু পার হতে যায় তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। এ সুযোগে ওত পেতে থাকা ডাকাতরা ফাঁদে পড়া চালক ও যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে পানিপথে নৌকায় পালিয়ে যায়। ট্রাক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের জন্য আলাদা ফাঁদ পাতে ডাকাতরা। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ও সেতুর মুখে ভাঙা ইট, পাথর ও লোহা বিছিয়ে রাখে। ফাঁদে কোনো গাড়ির চাকা পাংচার কিংবা থেমে গেলেই ডাকাতরা মারধর করে সর্বস্ব লুটে নেয়।
গত ১৭ জুলাই রাত ১টার দিকে কাটাখাল দ্বিতীয় ব্রিজে ডাকাতের রশির ফাঁদে পড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সবুজ আহমদ। দুর্ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। এর আগে ১০ জুলাই একই স্থানে ডাকাতের রশির ফাঁদে পড়েন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিজানুল কবীর। ফাঁদের রশিতে আটকা পড়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন লুটে নেয় ডাকাতরা।
মহাসড়কে ডাকাতি প্রসঙ্গে সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার এএসপি মোহাম্মদ সম্রাট তালুকদার জানান, সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে পুলিশের টহল অব্যাহত আছে। ডাকাতি রোধে পুলিশকে এখন থেকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।