মুস্তাফিজ। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার। এ দেশের প্রথম সিলভার জুবিলি হিট চলচ্চিত্রের নির্মাতা তিনি। তাঁর নির্মিত বেশির ভাগ ছবিই ব্যাপকভাবে ব্যবসাসফল। একসময় তাঁর নাম শুনেই দর্শক ছবি দেখার জন্য সিনেমা হলে ভিড় জমাতেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে একটি শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি রূপে দাঁড় করানোর জন্য আপ্র্রাণ চেষ্টা করে গেছেন যেসব চলচ্চিত্র নির্মাতা, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মুস্তাফিজ (মুস্তাফিজুর রহমান) ১৯২৮ সালের ১২ মার্চ, ঢাকার বংশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বড় ভাই প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম। তাঁর মামা, ই আর খানও ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক, খ্যাতিমান চলচ্চিত্রগ্রাহক প্রয়াত মাহফুজুর রহমান খান তাঁর মামাতো ভাই। তাঁর ছেলে ইশতিয়াকও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। বড় ভাই এহতেশাম-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলচ্চিত্র ব্যবসায় আগমন ঘটে মুস্তাফিজের। এরপর এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন, পরবর্তীতে হন পূর্ণাঙ্গ পরিচালক। মুস্তাফিজ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’ মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে। ঢালিউডের প্রথম সিলভার জুবিলি হিট চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’। এহতেশাম-মুস্তাফিজ ভ্রাতৃদ্বয় চেয়েছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য দুটোতেই যেন এ দেশের চলচ্চিত্র এগিয়ে যায়। মুস্তাফিজ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের একজন কুশলী নির্মাতা। তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পুরস্কার তিনি পাননি। আজকের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো এই কীর্তিমান মানুষটিকে চেনেন না, জানেন না। তাই বলে চলচ্চিত্র ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে যাওয়ার নয়।
মুস্তাফিজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় নাম। এ দেশের ইতিহাসে প্রথম সিলভার জুবিলি হিট উপহার দেন তিনি। ছবির নাম ‘হারানো দিন’। টানা ২৫ সপ্তাহ বা প্রায় ছয় মাস প্রেক্ষাগৃহে চলেছে সেই ছবি। তাও বেশ সাফল্যের সঙ্গে। যে ছবির মধ্যে ঢাকা পায় রহমান-শবনমের মতো অবিস্মরণীয় এক জুটি। মুস্তাফিজ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’ মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে। এটিই ঢালিউডের প্রথম সিলভার জুবিলি হিট চলচ্চিত্র। এ ছবির ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা, রূপের জাদু এনেছি’ গানটি এখনো জনপ্রিয়। বাংলার পাশাপাশি উর্দুতে ছবি নির্মাণ করে তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে পরিচিতি পান মুস্তাফিজ। এখনো পাকিস্তানের অনেক দর্শক তাকে স্মরণ করেন। মুস্তাফিজ পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্র- তালাশ, প্যায়সে, মালা, ডাক বাবু, ছোটে সাহাব, কুলি, আনাড়ি, পায়েল, বাবলু, মুন্না অউর বিজলী, একই অঙ্গে এত রূপ, আলোছায়া, মায়ার বাঁধন, ছোট সাহেব, নূপুর, বিজলী ও সোনিয়া। মুস্তাফিজ প্রযোজনাও করেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো রূপ কুমারী, পিচ ঢালা পথ ও বিজলী। এ খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা ১৯৯২ সালের ৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।