সীমান্তবরাবর শত বছরের পুরোনো ভূখণ্ডগত বিরোধের জেরে শুরু হওয়া কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের যুদ্ধ গতকাল দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। এ দিন একে-অন্যের বিরুদ্ধে ভারী কামান, রকেট ও ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুই দিনে নিহতের সংখ্যা ১৮ ছাড়িয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। এদিকে যুদ্ধ বন্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ ছাড়া হঠাৎ দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করেছে চীন। রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা
এক খবরে বলা হয়, গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো গোলাগুলি চালিয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। স্থানীয় সময় ২৫ জুলাই ভোর থেকে উভয় পক্ষ ভারী কামান ও রকেট ছুড়েছে। দুই দেশের মধ্যে গত এক দশকে এটি সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ। এতে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। আগের দিন ১২ জন নিহতের খবর জানানো হয়েছিল। থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উবন রাতচাথানি ও সুরিন প্রদেশে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী রাশিয়ার তৈরি বিএম-২১ রকেট সিস্টেমসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অনুযাযী উপযুক্ত পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছে আরও ৪৬ জন, এর মধ্যে ১৫ জন সেনা। কম্বোডিয়ার সেনারা অভিযোগ করেছেন, থাইল্যান্ড দুই দফায় ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, তারা কম্বোডিয়ার ভিতরে লক্ষ করে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলেছে। পাল্টা জবাবে কম্বোডিয়া দীর্ঘপাল্লার রকেট ছুড়েছে থাই সীমান্তের বেসামরিক এলাকায়। আরেক খবরে বলা হয়, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে থাইল্যান্ড অন্তত ১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, গতকাল থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। রাস্তাঘাটে থাই সেনাদের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। এক ডজনের মতো ট্রাক, সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক নিয়ে একটি থাই সামরিক বহর সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করে বলেছেন, কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তের সংঘর্ষ পূর্ণযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। লড়াইয়ে এখন ভারী অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে এবং সীমান্তজুড়ে ১২ জায়গায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই পূর্ণযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে।’
মধ্যস্থতার প্রস্তাব : আসিয়ান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্টে দুই দেশের যুদ্ধ বন্ধ করতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সীমান্ত সংঘর্ষ থামাতে তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে থাইল্যান্ড। থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সংঘর্ষ থামাতে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই।’ অন্যদিকে আনোয়ার ইবরাহিমের প্রস্তাব সমর্থন জানিয়েছে কম্বোডিয়া। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, বেসামরিকদের সুরক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে।
পশ্চিমাদের দুষল চীন : থাই-কম্বোডিয়া যুদ্ধের ইস্যুটি উদ্বিগ্ন করেছে চীনকে। সমাধানের আগ্রহ জানিয়ে চীন বলেছে, এ সংঘাতের জন্য দায়ী পশ্চিমারা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘বিরোধের মূল কারণ পশ্চিমা উপনিবেশবাদের ফল। থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া পরিস্থিতির উত্তেজনা কমাতে বেইজিং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতি অনুসারে, বেইজিংয়ে আসিয়ান মহাসচিব কাও কিম হোর্নের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘এ সমস্যার মূল কারণ অতীতে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের রেখে যাওয়া দীর্ঘস্থায়ী পরিণতির মধ্যে নিহিত। এখন এটি শান্তভাবে মোকাবিলা করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।’ হতাহতের ঘটনা গভীরভাবে বেদনাদায়ক এবং উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ওয়াং বলেন, ‘চীন সংকট সমাধানে সহায়তার জন্য একটি ন্যায্য এবং নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে চায়।’