প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার কথা ভাবছে বিএনপি। মূলত দ্রুত নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তিন মাসব্যাপী কর্মসূচির একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এতে রোড মার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ, আসনভিত্তিক পদযাত্রাসহ একগুচ্ছ কর্মসূচির প্রস্তাব আছে।
গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন নেতারা। সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
সম্প্রতি সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সরকারের ভেতরের একটি অংশ ও কয়েকটি দল নির্বাচন বিলম্বিত করার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এমন প্রেক্ষাপটে দলটি নতুন রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কর্মসূচি দিয়ে চাপে রাখা এই কৌশলের অন্যতম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোনো কোনো দল ও মহলের সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনীহা আছে। গণতন্ত্র উত্তরণের পথে তাদের এই অনীহার মধ্যে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। জনগণ এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে মাঠে নেমে গেলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তাদের পাশে থাকবে।’
বিএনপি সূত্র জানায়, সাংগঠনিক বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়, প্রতিটি আসনে দলের একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত। এই বিভক্তি দূর করতে এবং দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের একই প্ল্যাটফর্মে থেকে দলীয় কর্মসূচি পালনের পক্ষে মতামত দেন নেতারা। তফসিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্ত যাঁরা না মানবেন তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে আরো কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণেরও মতামত দেন তাঁরা। সভায় বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, নির্বাচনের দাবিতে মাঠের কর্মসূচি জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের মতামত শোনেন। সাধারণ মানুষ কী মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা কী এবং এখন বিএনপির করণীয় কী—এসব বিষয়ে তারেক রহমানের জিজ্ঞাসার জবাব ও সুপারিশ তুলে ধরেন নেতারা। বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে তাঁদের সুস্পষ্ট কর্মসূচি থাকা উচিত। কারণ জনগণের মাঝে এত দিন নির্বাচন নিয়ে দোলাচল থাকলেও এখন সবাই অনুধাবন করছেন, অনির্বাচিত সরকার সঠিকভাবে দেশ চালাতে পারছে না।
জানা গেছে, প্রস্তাবগুলো নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আবারও বৈঠক করার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে দলের কর্মসূচি আরো সুনির্দিষ্ট করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে তুলে ধরা হবে। পরে তা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল