মোগল শাসনামলের সালিশখানা এখনো ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে নেত্রকোনার আটপাড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে। যেখানে বিচারকার্য সম্পাদন করা হতো। আশপাশের এলাকা থেকে অপরাধের বিচার নিয়ে আসতেন ভুক্তভোগীরা। যখন থানা বা কোর্ট-কাচারির প্রচলন ছিল না কিন্তু তখনো শাস্তি দেওয়া হতো। আর সেই শাস্তি দেখে অপরাধও কম হতো।
কালের আবর্তে যদিও জরাজীর্ণ ভঙ্গুর অবস্থায় জঙ্গলের ভিতরে স্থাপনাটি এক ভূতুড়ে অবস্থায় রয়েছে, তবুও এটি দেখে ঈশা খাঁর বংশোদ্ভূতদের শাসনসহ জীবনচিত্র এক নজরে অবলোকন করা যায়। সবাই চান এটি সংরক্ষণ করা হোক। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকও জানান, ইতিহাস-ঐহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার শুনই গ্রামে মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ঈশা খাঁর বংশোদ্ভূত আসালত খাঁর বিচারকার্য সম্পন্নের সালিশখানাটি প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। যেখানে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের বিচারকার্য সম্পন্ন হতো। নেত্রকোনা সদরের সিংহের বাংলা এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ শ বছরের পুরোনো এই স্থাপনায় গিয়ে খাজনা আদায়সহ এলাকার সালিশ বৈঠকের ভার নিয়েছিলেন আসালত খাঁ। তখন থানার প্রচলন না থাকায় ওই সালিশ ঘরেই হতো বিচারকার্য সম্পন্ন। অপরাধ প্রমাণিত হলে হাজতঘরে রাখত অপরাধীদের। সপ্তাহে এক দিন বসা বিচারকার্যে দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন বিচারপ্রার্থীরা। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া এসব খাজনা আদায় ও সালিশসহ নিয়মগুলোর স্মৃতিচিহ্ন এখনো মুখে মুখে প্রচলন রয়েছে। ইমারত ভেঙে পড়লেও একনজর দেখলেই চোখে ভেসে ওঠে সেই মোগল আমল। ওই আমলের আসালত খাঁর বংশধরের মধ্যে বয়সের ভারে ন্যুব্জ অষ্টম বংশধরের একজন আবদুর রহিম খাঁ। স্থানীয়রাসহ বংশোদ্ভূতরা মনে করেন, এটিকে প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে সংরক্ষণ করা হলে ঐতিহাসিক নিদর্শনটি আগামী প্রজন্ম বই এবং ইতিহাসের পাশাপাশি স্বচক্ষে অবলোকন করতে পারবে। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, সমাজ-সভ্যতা বিবর্তনের মাধ্যমেই পরিবর্তিত হয়। হাজার বছর আগের ঐতিহাসিক নিদর্শন আমরা পাই সংরক্ষণ করার কারণেই। বিবর্তিত সমাজ জীবনযাত্রার স্মৃতি সংরক্ষণ রাখতে হবে। সংরক্ষণের মাধ্যমে জাদুঘর করে ধরে রাখতে হবে। সরকার সংরক্ষণের জন্য দায়িত্বশীল।
উল্লেখ্য, পাঁচ শ বছরের পুরোনো আটপাড়ার এই স্থাপনার মতোই জেলায় আরও বেশ কিছু স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন রয়েছে। তার মধ্যে সদর ও কেন্দুয়া উপজেলা অন্যতম।