দেশের প্রথম উড়ালসড়ক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পটি শুরু থেকে কচ্ছপগতিতে চলছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলে বেশ কয়েকবার প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে কারওয়ান বাজার অংশ চালু হলেও প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল কারওয়ান বাজার থেকে কুতুবখালী অংশের। অবশেষে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হলেও ঢিমেতালে চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার চিরচেনা যানজটের সমাধানের উদ্যোগ হিসেবে এক যুগের বেশি সময় আগে এ প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডের ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সরকারি বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে এ এক্সপ্রেসওয়ে করতে চুক্তি সই হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০১৬ সালে শেষ করার কথা ছিল। তবে পরে আবার ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে এটির নির্মাণকাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৭ সাল। সেটি পিছিয়ে করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর। এরপর আবারও পিছিয়ে হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চতুর্থবার সেই সময়সীমা পিছিয়ে দাঁড়ায় ২০২৩ সালের জুনে। তবে সর্বশেষ পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মেয়াদ আবার বাড়ানো হয়। এরপর আবার ২০২৫ সালের জুন এবং সবশেষ ২০২৬ সালের জুন বাড়ানো হয়। প্রকল্পটি ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও এখন গতিহীন। কাজ চলছে ঢিমেতালে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে হওয়া প্রথম চুক্তি অনুযায়ী এর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। এরপর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সংশোধনী চুক্তিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির চুক্তি অনুযায়ী, এ ব্যয়ের ২৭ শতাংশ ব্যয় বহন করবে বাংলাদেশ সরকার, যেটির পরিমাণ ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। বাকি ৬ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা দেবে ইতাল-থাই কোম্পানি। তবে শুরুর দিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে কোম্পানিটি। ফলে ২০১৩ সাল থেকে কাওলা এলাকায় কিছু পাইলিংয়ের কাজ শুরু করলেও পুরোদমে কাজ করা সম্ভব হয়নি। এরপর ইতাল-থাই ‘ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানি গঠন করে। এতে ইক্যুইটির পরিমাণ নির্মাণ ব্যয়ের ৩১ শতাংশ এবং ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড বা ভিজিএফ ২৭ শতাংশ, যা সরকার দিচ্ছে। নির্মাণ ব্যয়ের বাকি ৪২ শতাংশ অর্থ সংগ্রহ নিয়ে সংকটে পড়ে ইতাল-থাই, যেটির প্রভাবে পিছিয়ে যায় নির্মাণকাজ। এরপর ইতাল-থাই কোম্পানি ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড গঠন করে বিনিয়োগকারী কোম্পানি হিসেবে। এতে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগ ও অর্থায়ন চুক্তি করে প্রকল্পে কাজ শুরু করা হয়।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিজস্ব তহবিল থেকে ঠিকাদাররা এ সময়ে কারওয়ান বাজার-মালিবাগ অংশে কিছু কাজ করতে পেরেছেন। অন্যদিকে মালিবাগ-কুতুবখালী অংশে কাজ শুরু করলেও তা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আবার জুন মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব ধরনের জটিলতা কেটেছে। অর্থাৎ ভূমি অধিগ্রহণ, অর্থ ছাড়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব মিটছে। গত মাসের ২৯ তারিখ থেকে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, দুটি বড় প্রজেক্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফেল হওয়া মানে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফেল হওয়া। এত বড় বিনিয়োগ করে এর ইউটিলিটি পাওয়া যাবে না। সুতরাং প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।