দেশ পুনর্গঠনের জন্য যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, তার একত্র একটি গ্রহণযোগ্য সনদ তৈরি করতে গঠন করা হয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপর অর্থনীতির বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কমিশনের পেছনে সরকারের কত টাকা খরচ হয়েছে। যে পরিমাণ টাকা খরচ করে এসব কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের প্রাপ্তি কী? সরকারের স্বচ্ছতার কারণে এসব খরচের হিসাব প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
জানা গেছে, ১১টি কমিশনের মধ্যে একটি হলো গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। একই কমিশনের কাজের সহায়তার জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই জরিপের জন্য মোট খরচ হয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া এই কমিশনের আরও অনেক খরচ আছে। অন্যান্য কমিশনেরও এ ধরনের নানা খরচ আছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেহেতু এগুলো সব জনগণের টাকা। ফলে কোন কমিশন কত খরচ করেছে বা করছে ব্যয়ের হিবাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। এতে করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে কমিশনগুলোর ব্যয় নির্বাহে একরকম উন্মুক্ত চেক দিয়ে রেখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। যা ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। অবশ্য এর বাইরে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের একটি জরিপকাজ পরিচালনাতেই ব্যয় করা হয়েছে ৪ কোটি টাকারও বেশি। শুধু তা-ই নয়, এই জরিপ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের শুধু সম্মানি বাবদ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া মুদ্রণ, প্রচারণাসহ অন্যান্য ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এ জন্য নতুন অর্থবছরে কমিশনগুলোর জন্য ব্যয়ের কোনো সীমা রাখা হয়নি।
তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলের পর দেশ পুনর্গঠনে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। এসব কমিশনের কার্যাদি বাস্তবায়নের জন্য গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ এসব কমিশনের অনুকূলে ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের অনুকূলে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনুকূলে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অনুকূলে ৯৫ লাখ টাকা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনায় ৮৩ লাখ টাকা এবং বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অবশ্যই নিশ্চিত হবে। আমরা সাংবাদিকদের ও তার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করার কথা বলেছি। এটা করা গেলে কোনো ব্যক্তি, পরিবার, রাজনৈতিক শক্তি বা সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর সাংবাদিকতা নির্ভরশীল থাকবে না।