রাশিয়ান তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ওয়াশিংটনের মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির হুমকির পর মস্কো সফরে গেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) মস্কোয় পৌঁছেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনে, তাহলে ২৫ শতাংশ শুল্কের অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্পের এই চাপের পরও অজিত ডোভাল তার পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল না করে মস্কো গেছেন। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, তিনি সেখানে অস্ত্র ও তেল কেনা নিয়ে কথা বলবেন।
সোমবার (৪ আগস্ট) ট্রাম্প বলেছেন, ‘বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ভারত ভালো নয়। তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর বাণিজ্য করে, কিন্তু আমরা ওদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারি না। তাই আমরা ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছি। আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই শুল্কের পরিমাণ আরো অনেকটাই বাড়িয়ে দেব। কারণ, ওরা রাশিয়ার তেল কিনছে। তারা রাশিয়ার ওয়ার মেশিনকে জ্বালানি যোগাচ্ছে। ওরা যদি এটা করে, আমি খুশি হব না।’
ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে লাভ করছে, আর ইউক্রেনের রাশিয়ার ওয়ার মেশিন মানুষকে হত্যা করছে।’
ঠিক এই পরিস্থিতিতে অজিত ডোভালের রাশিয়া যাওয়া এবং তেল ও অস্ত্র কেনা নিয়ে কথা বলার মধ্যে একটা বিশেষ বার্তা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা জানাচ্ছেন, ভারতও একটা বার্তা পাঠাতে চাইছে।
বিশ্লেষকরা যা মনে করেন
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘অবশ্যই এর মধ্যে একটা বার্তা আছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনে। রাশিয়া থেকে আমরা এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়েছি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় এস-৪০০ এর কার্যকারিতা দেখেছি। এই এস-৪০০ এর পুরো কনসাইনমেন্ট পাঠানো নিয়ে কথা হবে।’
তবে উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, ‘এফ-৩৫ কেনা বা না কেনার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আগে এফ-৩৫ নেবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু সেটা নেওয়া হয়নি।’
এফ ৩৫-এর বিকল্প হলো রাশিয়ার এসইউ-৫৭
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, ভারত এফ-৩৫ কিনছে না। এই অবস্থায় তাদের সবচেয়ে ভালো বিকল্প রাশিয়ার এসইউ-৫৭। রাশিয়াও ভারতের বিমান বাহিনীকে ‘গোল্ডেন ডিল’ অফার করেছে। সেটা হলো, এসইউ-৫৭ এর উৎপাদন ভারতেও হতে পারবে। এসইউ-৩০ এমকেআই তৈরির যে পরিকাঠামো আছে, তাকে কাজে লাগিয়েই এসইউ-৫৭ বি-র উৎপাদন করা যেতে পারে।
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার অংশ হিসেবে এসইউ-৫৭এস কেনা ও প্রযুক্তি সহায়তা নিয়েও কথা হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন চাপে তা স্থগিত ছিল। এখন যদি ভারত এসইউ-৫৭ কেনে তাহলে আরো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে বা রপ্তানি নিয়ে আরো কড়াকড়ির মুখে পড়তে হতে পারে।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া ইউরেশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, ‘ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে একটা বার্তা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানকে সুবিধা দিচ্ছে, এই অবস্থায় ভারতের আমেরিকার কাছ থেকে কোনো সাজসরঞ্জাম কেনা উচিত নয়। আমরা এটা আগেও দেখেছি। আমেরিকা বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার নয়। কে জানে, তারা ভবিষ্যতে কোন পথ নেবে এবং আমাদের উপর আরো শুল্ক বসাবে না?
তিনি বলেছেন, ‘ওরা ১৮ মাস দেরিতে জিই ৪০৪ ইঞ্জিন সরবরাহ করছে, ফলে আমাদের তেজস যুদ্ধবিমানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ভারত তো জানিয়েছে, আমেরিকাও রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু কিনছে। এখন দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের সিলেকটিভ অ্যামনেশিয়া হয়েছে।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত