ঐতিহাসিক জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবসের প্রথম বার্ষিকী উদ্যাপনে গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় এক বর্ণাঢ্য আয়োজন। বর্ণিল এই আয়োজনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেমেছিল লাখ লাখ মানুষের ঢল। গণরোষের কবলে গত বছরের ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাই পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। পতন হয় তার দীর্ঘ ১৫ বছরের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসনের। স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের পতনের প্রথম বার্ষিকী উদ্যাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত ওই বর্ণাঢ্য আয়োজনে অংশ নিয়েছিল সর্বস্তরের ছাত্র জনতা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাসিস্টের পলায়ন উদ্যাপন, ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ, স্পেশাল ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি’সহ নানা আয়োজনে সাজানো ছিল ৩৬ জুলাই উদ্যাপনের এই আসর। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জমকালো এই আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় ছিল শিল্পকলা একাডেমি। শ্রাবণের বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের ঢলে ভিন্ন এক ভালো লাগার পরিবেশ সৃষ্টি হয় মানিক মিয়া এভিনিউজুড়ে। হাতে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে ও মাথায় পতাকা বেঁধে পুরো মানিক মিয়া এভিনিউতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেম মূর্ত করে তোলে উপস্থিত লাখো জনতা। সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টায় শুরু হয় দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান। তারা একে একে পরিবেশন করে ‘এই দেশ আমার বাংলাদেশ’, ‘আয় তারুণ্য আয়’, ‘জীবনের গল্প’, ‘ওমা আর কেঁদো না’, ‘যাঁদের জন্য পেলাম আবার নতুন বাংলাদেশ’, ‘জারিগান’সহ ইসলামিক সংগীত। এরপর ‘কলরব শিল্পীগোষ্ঠী’ পরিবেশন করে ‘তোমার কুদরতি পায়ে’, ‘দে দে পাল তুলে দে’, ‘ধন ধান্যে পুষ্পভরা’, ‘ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি’ ও ‘দিল্লি না ঢাকা’। একক সংগীতপর্বে নাহিদ পরিবেশন করেন ‘পলাশীর প্রান্তর’ ও ‘৩৬ জুলাই’সহ দুটি গান। এরপর ‘নোঙর তোল তোল’, ‘তুমি প্রিয় কবিতা’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘চল চল’ ও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানগুলো পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তাশফি। গানের ফাঁকে ফাঁকে স্লোগানে অনুষ্ঠানস্থল প্রকম্পিত করে তোলে ছাত্র জনতা। এরপর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে বেলুন উড়িয়ে ফ্যাসিস্টের পলায়ন উদ্যাপন করা হয়। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন ‘চিটাগাং হিপহপ হুড’। তারা গেয়ে শোনায় ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমরা আসছি ঢাকা কাঁপাইতে’সহ কয়েকটি গান। র্যাপার সেজান গেয়ে শোনান ‘কথা ক’, ‘হুদাই হুতাশে’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’সহ কয়েকটি র্যাপ সংগীত। ব্যান্ডদল ‘শূন্য’ পরিবেশন করে ‘শত আশাদ’, ‘বেহুলা’, ‘রাজাহীন রাজ্য’ ও ‘শোন মহাজন’সহ কয়েকটি গান। এরপর মঞ্চে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমি। দলীয়ভাবে তারা পরিবেশন করে ‘আমাদের বাংলাদেশ’, পলাশ গেয়ে শোনায় মা’ মৌসুমি গেয়ে শোনায় ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’, ‘এখনো আমরা জেগে আছি’, ইত্যাদি।
রাতে ড্রোন শোতে উঠে এসেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সব অপকর্ম। সেই সঙ্গে ড্রোনের গ্রাফিতিতে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের গর্বিত অধ্যায়। স্থান পেয়েছে রক্তাক্ত জুলাইয়ের না বলা অনেক গল্প। সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মূর্ত হয়ে উঠেছে জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা। উঠে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের নানান স্লোগান। ড্রোনের আলোয় আকাশে চিত্রিত হয়েছে দেশপ্রেমের নানান পঙ্ক্তি। সবাই মিলে আমরা গড়ব বাংলাদেশ ২.০, কিন্তু পথ দুর্গম বলে থামব না আমরা বাংলাদেশ পক্ষের লোক, আমরা জানি ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গঠনে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ, আগে খুনি সরকারের ভয়ে জনগণ পোস্ট ডিলিট করত এখন জনগণের ভয়ে সরকার পোস্ট ডিলিট করে। আব্বু, তুমি কান্না করতেছো যে বলে আর কাঁদছে না কোনো একরামের কন্যা, আয়নাঘরের অন্ধকার ঘরে বসে আর কাউকে লিখতে হচ্ছে না, খুনিকে ছাড়া ভালো আছে বাংলাদেশ, গণলুটতন্ত্রী সরকারের কোনো মাফিয়া লুট করছে না বাংলাদেশের ব্যাংক ইত্যাদি স্লোগানের পাশাপাশি খুনি হাসিনার ডাইনিরূপ তুলে ধরা হয়েছে ড্রোনের আলোয়। এমন দৃশ্যকল্পই চিত্রিত ছিল ৩৬ জুলাই উদ্যাপনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের ড্রোন শোতে।