জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান চলাকালে শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু, অধ্যাপক মাকসুদ কামালের সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অন্য সব তথ্য-উপাত্ত বাদ দিলেও এই সরাসরি নির্দেশই শেখ হাসিনার অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল তৃতীয় দিনের মতো প্রসিকিউশনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় (ওয়াইড স্প্রেড) ও পদ্ধতিগতভাবে (সিস্টেম্যাটিক) যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি) হিসেবে এর সব দায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এসব যুক্তি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। তাঁর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় আজ আবারও দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় চিফ প্রসিকিউটরকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, আবদুস সোবহান তরফদার, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ। অন্যদিকে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের একপর্যায়ে শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু, অধ্যাপক মাকসুদ কামালের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোন কথোপকথনের অডিও শোনানো হয়। এসব অডিওর বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব কথোপকথনে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে তাপসের সঙ্গে কথোপকথনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার বিষয়ে স্পষ্টীকরণ, ড্রোন দিয়ে ছবি তুলে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়ের বিষয়টি অন্যতম।’ চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘সব তথ্য-উপাত্ত বাদ দিলেও পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরাসরি হত্যার নির্দেশ শেখ হাসিনার সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটিসংক্রান্ত অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট।’ যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘পুলিশের বিভিন্ন নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি প্রত্যেক থানার সামনে এলএমজি (লাইট মেশিন গান) পোস্ট স্থাপনের নির্দেশনা ছিল। এ নির্দেশনার আলোকে প্রত্যেক থানার সামনে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বালুর বস্তা দিয়ে বাংকার তৈরি করে সেখানে এলএমজি স্থাপন করা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে। এটা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রতিফলন। এলএমজি ছিল একটি মারণাস্ত্র। আন্দোলনে নিহতদের শরীর থেকে উদ্ধারকৃত বুলেট ও পিলেট থেকে বিশ্লেষণ করে মারণাস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
ইনুর মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি পিছিয়ে : জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের বিষয়ে শুনানির তারিখ পিছিয়ে ২৩ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন।
হানিফসহ চার আসামিকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ আদেশ দেন।