সারা দিন শেষে রাতে ঘুমানোর আগে ত্বক ও চুলের বিশেষ যত্ন দরকার। কারণ রাতের বেলায় ত্বক মেরামতের কাজ করে থাকে। শরীরের ঘাম, বাইরের ধুলো-ময়লা, তেল জমে লোমকূপের ত্বকের মুখ বন্ধ থাকায় ত্বক মেরামত হয় না। স্বাভাবিক, শুষ্ক ও তৈলাক্ত যে ধরনের ত্বকই হোক না কেন, তাই রাতের পরিচর্যা মাস্ট...
সারা দিন ত্বকের যত্ন নেওয়া হলেও রাতের যতেœ অনেকেই অবহেলা করে থাকেন। তাই দিনে অত্যন্ত দামি এবং ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহার করেও স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়া যায় না। রাতে ঘুমের সময় শুধু শরীরই বিশ্রাম পায় না, ত্বকও বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এ কারণে ঘুমের আগে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। অনেকেই আছেন, যারা রাতে ত্বকের যত্ন নিলেও ত্বকের অবনতি হতে থাকে। এর একটিই কারণ, আর তা হচ্ছে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক উপায়ে যত্ন না নেওয়া। ভুল পদ্ধতিতে যত্ন নিলে ত্বকের উন্নতি হওয়ার চেয়ে অবনতিটাই হয়ে থাকে বেশি। রাতে কীভাবে যত্ন নিতে হয় তা জেনে নিতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
শুষ্ক ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। নিয়ম মেনে যত্ন নিলে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সবসময় এবং সবার আগে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। দিনের বেলা যদি কোনো প্রকার প্রসাধনী সামগ্রী বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয় তাহলে অবশ্যই রাতে ডাবল ক্লিনজিং করে নিতে হবে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন, সিরামাইড, অ্যালোভেরা, হানি, রাইস এক্সট্র্যাক্টের মতো উপাদানগুলো আছে কি না দেখে ক্লিনজার বাছাই করলে ভালো। কেননা, উপাদানগুলো ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ত্বক সবসময় তৈলাক্ত থাকে, চিটচিটে ভাব থাকে এবং বাইরের ধুলোবালি খুব সহজেই ত্বক শুষে নিয়ে ত্বকের লোমকূপগুলো বন্ধ করে দেয়। তাই তৈলাক্ত ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। এ ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেও ডাবল ক্লিনজিং আবশ্যক। এ ধরনের ত্বকে অয়েল বেজড ক্লিনজার স্যুট করে না। সেক্ষেত্রে নিরাপদ বিকল্প হচ্ছে মাইসেলার ওয়াটার। আর তৈলাক্ত ত্বকে যেহেতু ব্রনের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে তাই স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার ভালো। টোনিং ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই সংবেদনশীল ত্বক ছাড়া সব রকম ত্বকে টোনিং করা জরুরি। এরপর আসে ময়েশ্চারাইজিং। ক্লিনজিং এবং টোনিংয়ের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার সব রকম ত্বকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
মিশ্র ত্বকের যত্ন
মিশ্র ত্বক নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়ে। কারণ এ ধরনের ত্বকে কিছু অংশে শুষ্কতা এবং কিছু অংশে তৈলাক্ত ভাব অনুভূত হয়ে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের ত্বকের জন্য সামগ্রী বুঝে-শুনে কেনা উচিত। প্রথমেই মিশ্র ত্বকে ডাবল ক্লিনজিং করে নিতে হবে। টোনিং করার জন্য প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন - গোলাপ জল বা জিঞ্জার মিন্ট টোনার। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যালোভেরা জেল। এটি মিশ্র ত্বকের জন্য উপকারী। তবে অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জি থাকলে এর বদলে অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে কম্বিনেশন ত্বকের রাতের যত্ন শেষ।
জেনে রাখুন :
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যতই ক্লান্ত থাকুন না কেন, মেকআপ অবশ্যই ভালোভাবে রিমুভ করতে হবে। হাত,পা ও মুখের ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি গোসল করতে পারেন তাহলে খুবই ভালো হয়। কারণ, ত্বক পরিষ্কার থাকলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিক মতো হয় এবং ত্বক ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারে।
- রোজ রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে কোনো ময়েশ্চার বা লিপবাম লাগিয়ে নিন। নরম কাপড় দিয়ে এক মিনিট ঠোঁটে ঘষুন। তারপর গোলাপজল ও গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে লাগান। এর ফলে ঠোঁট কোমল ও মোলায়েম হবে।
- রাতে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে, চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে চুলের জট ছাড়িয়ে চুল আঁচড়ে নেন। মেটালের চিরুনি ব্যবহার না করাই ভালো। চুল বড় হলে পনিটেল বা বিনুনি বেঁধে নিন। এর ফলে চুলে জট পড়বে না। তবে খুব টেনে টাইট করে চুল বাঁধবেন না।
- ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। অতিরিক্ত টেনশন বা স্ট্রেস নিয়ে ঘুমাতে গেলে ঘুম ভালো হয় না এবং ঘুম ভালো না হলে ত্বকে তার ছাপ পড়ে।
লিখেছেন : ফেরদৌস আরা