সিকিমে পাহাড় ধসে ভেঙে গেছে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ। ফলে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ দ্রুত বাড়ছে। উজানের ঢল যে কোনো সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করে মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, তিস্তার পানি বাড়লেও আপাতত তেমন একটা বন্যার শঙ্কা নেই।
সূত্রে জানা গেছে, সিকিমে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর মালদহের গজলডোবা, বামনগোলা ও পুরাতন মালদহে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গজলডোবা বাঁধের পানি তিস্তার ডালিয়া পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। দুপুর ৩টার তুলনায় সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ বেড়েছে দশমিক ৭ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
গজঘণ্টা ইউনিয়নের সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, ভারত পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। আমরা সজাগ রয়েছি। নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার খালিসা চাপনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান সরকার, সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য সেলিম সরকার লেবুসহ একাধিক ব্যক্তি বন্যার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভারত গজলডোবা বাঁধ খুলে দিলে তাদের এলাকা প্লাবিত হবে। এই সময়ে বন্যা হলে খেতের ফসলসহ অনেক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন।
ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর ন্যায্য পানির হিস্সার দাবিতে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর টাউন হলের মূল ফটকের সামনে তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসময়ে বন্যা হলে জমির ফসল মারাত্মক ক্ষতি হবে। বর্তমানে আমনসহ বিভিন্ন ফসল কৃষকের জমিতে রয়েছে। বন্যা আতঙ্কে কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া এই সময়ে বন্যা হলে নদী-তীরবর্তী ও চর এলাকার খেটেখাওয়া মানুষের কাজের অভাব দেখা দিতে পারে। ফলে বেকায়দায় পড়তে পারে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার হাজার হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ। এ ছাড়া পুকুর ও জলাশয়ের মাছও ভেসে যেতে পারে।
জানা গেছে, এর আগে জুন-জুলাই মাসে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় আমনের বীজতলা, বাদাম, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া কোটি কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। সেই ধকল কাটিয়ে না উঠতেই আবার বন্যা হলে এই অঞ্চলের কৃষক ও মৎসজীবীদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে ভারতের একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এক দিনে ১ লাখ ৪০ হাজার কিউসেকের বেশি পানি প্রবেশ করে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে। গত বছরের ৪ অক্টোবর পানি এসেছে ৮৭ হাজার কিউসেক। ওইদিন রংপুরের পাঁচ জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। প্রবল স্রোতে বাংলাদেশে ভেসে আসে ৬টি লাশ। রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা এলাকায় এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বড় বড় মাছও ভেসে এসেছিল সেই সময়।