তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশকে ক্রোধ বলে। যা অস্বস্তিকর উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্রোধ একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যা অভ্যন্তরীণ উৎকণ্ঠা এবং প্রতিশোধের আকাক্সক্ষার ফলস্বরূপ উৎকণ্ঠা যখন হিংস্র হয়ে ওঠে। তখন ক্রোধের আগুনকে আরও তীব্র করে তোলে। এই হিংসাত্মক উত্তেজনার কারণে মানুষ তার বুদ্ধির নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং তার মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে। মানুষ শিষ্টাচার ও ভদ্রতার ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে নিজেকে ক্রোধে রূপান্তরিত করে। মানুষ একে শক্তি বলে মনে করে। প্রকৃতপক্ষে ক্রোধ হচ্ছে একটি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ যা নিজেকে আগুন ধরিয়ে অন্যদের দগ্ধ করে। ক্রোধ হচ্ছে প্রাকৃতিক অনুভূতি, তবে যারা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের ওপর ক্রোধ নীতি বাচক প্রভাব ফেলে। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বলে দিয়েছেন, আল্লাহ সুবাহানাহু ওতায়ালা কালামে মাজিদে বলেছেন যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে তারাই হচ্ছে সৎকর্মশীল, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন। সুরা আল ইমরান আয়াত ১৩৪। ক্রোধ মানুষের মানসিক অবস্থাকে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অপরাধবোধ, হতাশার দিকে নিয়ে যায়। কেবলমাত্র মানসিক অবস্থারই নয়, ক্রোধ ভয়াবহভাবে মানুষের শারীরিক অবস্থার ওপর ও প্রভাব ফেলে, যেমন মাথাব্যথা, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি। তাই অনতিবিলম্বে আমাদের নিজেদের ক্রোধ দমন করা উচিত, কেননা ক্রোধের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীদের উদাহরণ দিয়ে পবিত্র কোরআনে বারবার ক্রোধ দমন করার জন্য ও ক্ষমা করার কথা উল্লেখ করেছেন। ইব্রাহিম (আ.) এর পিতা বলল হে ইব্রাহিম তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ যদি তুমি বিরত না হও আমি অবশ্যই পাথরের আঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও। হজরত ইব্রাহিম বললেন, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক আমি আমার পালনকর্তার কাছে আপনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি মেহেরবান (সুরা মারিয়াম আয়াত ৪৬-৪৭)। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে হাদিসে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি তার এক ঘনিষ্ঠ জনের হত্যাকারীকে নবীজির নিকট নিয়ে এলো। নবীজি তাকে বললেন, তাকে ক্ষমা করে দাও। সে ব্যক্তি অস্বীকার করল, অতঃপর নবীজি বললেন, তুমি যদি তাকে হত্যা করো তাহলে তুমি তো তার মতোই হয়ে গেলে, অতঃপর লোকটি ক্ষমা করে দিল। (সুনানে আন নাসাঈ হাদিস নম্বর ৪৭৩০)।
পবিত্র কোরআনে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন ক্রোধ নিয়ন্ত্রণকারীকে আল্লাহতালা ভালোবাসেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করে যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে। (সুরা শুয়ারা আয়াত ৩৬-৩৭)। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা ধার্মিকতার লক্ষণ। আর ধার্মিক ব্যক্তিকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ক্রোধ শয়তানের অন্যতম একটি হাতিয়ার, শয়তান সদা সর্বদা বনি আদমকে জাহান্নামের দিকে ডাকে। তাই আমাদের শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা একান্ত অপরিহার্য। মুআজ ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীজির সামনে ২ লোক পরস্পরকে গালিগালাজ করে এমনকি তাদের একজনের মুখমণ্ডলে রাগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে সময় নবীজি বললেন নিশ্চয়ই আমি এমন একটি বাক্য জানি এ ব্যক্তিটি যদি তা উচ্চারণ করত তবে অবশ্যই তার ক্রোধ চলে যেত তা হলো আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। জামে আত তিরমিজি হাদিস নম্বর ৩৪-৫২। নবীজি বললেন, যদি কেউ ক্রোধান্বিত হয় সে যেন চুপ থাকে। (মুসনাদে আহমদ)। আবুজার (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবীজি বলেছেন তোমাদের কারোর যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগের উদ্রেক হয় তাহলে সে যেন বসে পড়ে এতে যদি তার রাগ দূর হয় তো ভালো অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে (শুনানে আবু দাউদ হাদিস নম্বর ৪৭৮২)। এক ব্যক্তি নবীজিকে বললেন আমাকে উপদেশ দিন তিনি বললেন রাগ করোনা সে কয়েকবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করল আর নবীজি বললেন রাগ করো না (সহিহ বুখারি হাদিস নম্বর ৬১১৬)।
লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ দক্ষিণ পীরেরবাগ অলি মার্কেট ঢাকা