ইমান। একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যদি কোনো মুসলমানকে বলা হয়, তোমাকে পৃথিবীর সব সম্পদের মালিকানা দেওয়া হবে বিনিময়ে ইমানের মালাটি গলা থেকে খুলে ফেল, এমন লোভনীয় প্রস্তাবকে অনায়াসে প্রতিটি মুমিনই না করে দেবে। কেননা সব ধরনের লোভ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রেমের লোভে পড়ে যাওয়ার ঘোষণাই হলো ইমান। আর যে ব্যক্তি মনে-প্রাণে ইমানদার হয়, আল্লাহকে রব বলে আর নবীকে (সা.) নেতা বলে মেনে নেয়, তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেওয়া হয়। দুনিয়ার ষাট-সত্তর বছরের জীবনে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গিয়ে আখেরাতের জান্নাতের মালিকানা হারাবে এমন বোকা কোনো মুমিন হতে পারেন না।
ইমানের ঘোষণা দেওয়ার জন্য দুটি বিষয় প্রয়োজন। এক হলো আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা, দ্বিতীয় রেসালাতের স্বীকৃতি। যে আল্লাহকে এক বলে মেনে নেয় সে নবীকেও নেতা বলে মেনে নেয়। আর যে নবীকে নেতা মেনে নেয় সে পুরো দীনকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার শপথ নিয়ে ইমানের উত্তপ্ত ময়দানে পা রাখে। ইমানের পুরস্কার সম্পর্কে বুখারি শরিফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা রসুলকে (সা.) জানিয়েছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হলো আমার দুর্গ। যে এ দুর্গে আশ্রয় নেয় সে আমার শাস্তি থেকে পুরোপুরি নিরাপদ। প্রখ্যাত মিসরীয় মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ মাদানি (রহ.) খতিব বাগদাদির সূত্রে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আল্লাহ। আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ যে ব্যক্তি এ কথা মেনে নেবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব, জাহান্নাম হারাম।
কালেমায়ে তাওহিদ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ শুধু যে ইমানের খাতায় নাম লেখায় তা নয়, বরং তার পেছনের জীবনের গুনাহও মাফ হয়ে যায়। হাফেজে হাদিস ইমাম দায়লামি (রহ.) খাদেমে রসুল হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন- ‘কোনো মানুষ যখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণ করে তখন কালেমায়ে তাওহিদের নূর সাত আকাশ ছাড়িয়ে আরশে আজিমে আল্লাহর কুরসির সামনে গিয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কাঁপছ কেন? স্থির হও।’ কালেমায়ে তাওহিদ বলে, ‘হে আল্লাহ! আমি কীভাবে স্থির হব, আমাকে যে মেনে নিয়েছে এখনো তার গুনাহ ক্ষমা করা হয়নি।’ জবাবে আল্লাহ বলেন, তুমি এখানে আসার আগেই আমি তার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছি।
কালেমায়ে তাওহিদের এত মর্যাদা কেন? কারণ কালেমায়ে তাওহিদের মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নেওয়া হয়। ফলে যত ধরনের শিরক ও কুফরি আকিদা রয়েছে সেগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়। মুসনাদে আহমাদ ও তিরমিজি শরিফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা তাঁর হাবিবকে বলেছেন, ‘হে নবী! আপনার উম্মতদের বলে দিন, তারা সবাই যেন আমাকেই ভয় করে। কেননা ভয়ের উপযুক্ত সত্তা কেবল আমিই। আর ইমানের ঘোষণা দেওয়ার পর কেউ যেন আমার সঙ্গে কোনো বাস্তব বা কল্পিত সত্তাকে শরিক না করে। যে আমার সঙ্গে কোনো শরিক করবে না তাকে ক্ষমা করে দেওয়া আমার কর্তব্য।’
শেষ করছি হজরত মুসার (আ.) একটি চমৎকার ঘটনা শুনিয়ে। মুসনাদে আবু ইয়ালায় হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- তুর পাহাড়ে ৪০ দিন অবস্থানের পর তিনি যখন তাওরাত কিতাব পেলেন তখন আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ! আমাকে একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দিন যে দোয়ার মাধ্যমে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আপনি সাড়া দেবেন। আল্লাহ বললেন, মুসা! তুমি দোয়ার সময় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে দোয়া করবে। মুসা নবী বললেন, হে আল্লাহ! এ কালেমা পড়ে তো সবাই আপনাকে ডাকে। আমি বিশেষ কোনো দোয়া জানতে চেয়েছি। জবাবে আল্লাহ বললেন, হে মুসা! লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কত দামি কালেমা জানো? পৃথিবীর সব মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিকুল, সাত আসমান ও সাত আসমানের অধিবাসী সাত জমিন ও সাত জমিনের অধিবাসী সবাইকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর কালেমায়ে তাওহিদ অন্য পাল্লায় রাখা হয়, অবশ্যই কালেমায়ে তাওহিদ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর’ ওজন ভারী হবে।’ সুবহানাল্লাহ।
♦ লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কোরআন ফাউন্ডেশন এবং খতিব, রূপায়ণ টাউন সেন্ট্রাল মসজিদ