২১ আগস্ট, ২০১৬ ১৯:৫৯

দুইবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন প্রিয়তি!

অনলাইন ডেস্ক

দুইবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন প্রিয়তি!

দুই দুইবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। আর এই তথ্য তিনি নিজেই দিয়েছেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে ভক্তদের পরামর্শ দিতে গিয়ে একটি স্ট্যাটাসে নিজের সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মডেল ও অভিনেত্রী। প্রিয়তির ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

আত্মহত্যা !!

২০১১ সালে দুইবার চেষ্টা করেছিলাম। জ্বি, দুইবার। অনেক বড় ভুল পদক্ষেপ ছিল। যদি তখন তা হয়ে যেত আজকের এই পাওয়ার / ছোট্ট অর্জনের তৃপ্তি পেতাম না। জীবন সংগ্রামে যখন দুই দুধের বাচ্চা নিয়ে বিদেশের মাটিতে একা হিমশিম খাচ্ছিলাম, তখন যুদ্ধ থেকে বাঁচার থেকে আত্মহত্যা নামক পরাজয়কে সহজ মনে হচ্ছিল। গতকাল রাতে "Stop Suicide"-এর নৈশ ভোজ সেমিনারে সবার সংগ্রামের ঘটনা শুনতে গিয়ে নিজেরটাও তীব্রভাবে মনে পড়ছিল।

সেমিনারের মূল এজেন্ডা ছিল অস্ট্রেলিয়ায় চলতি আত্মহত্যার হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে। যার বেশির ভাগ হচ্ছে নিম্ন ৪৫ বছর পুরুষ। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিদিন ১২ জন পুরুষ আত্মহত্যা করছে অর্থাৎ একজন নিজের জীবন নিজেই কেড়ে নিচ্ছে প্রতি দুই ঘণ্টায়। এই বছর এখন পর্যন্ত একচল্লিশ জন (৪১) সাবেক অস্ট্রেলিয়ান সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২৭৪ জন সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন।

আমেরিকায় প্রতিদিন বিশজন veterans আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। Recent years গুলোতে non-veterans আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের ভিতর।

আয়ারল্যান্ডে আত্মহত্যার ব্যাপারটি এখন ভয়াবহভাবে না হলেও প্রতি লাখে গড়ে ৬ জন, ২০১১ সালের পর আত্মহত্যার হার অনেক অংশে কমেছে। ২০১১ সালে ৫৫৪ জন আত্মহত্যা করেছিলেন।

আসলে, তথ্য তো চাইলে অনেক দেয়া যায় বা জানা যায়। আমি আমার জীবন থেকে যা শিখেছি, আমাদের নিজেদের জীবন নিজের হলেও তা নিজের হাতে নিবার অধিকার আমাদের নেই, আমাদের জীবন নেয়ার অধিকার যদি থাকে তাহলো শুধুমাত্র আমাদের মা-বাবার। মা, যিনি নয় মাস কষ্ট করে পেটে রেখে জন্ম দিয়েছেন আমাদের। বাবা, যিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের বড় করেন , নিজের সুখের চেয়ে সন্তানের সুখ বড় করে দেখেন। যে শিশুটি হাঁটতে পারে না, খেতে পারে না, কথা বলতে পারে না, তাদের হাঁটি হাঁটি –পা পা করে বড় করে তুলেন। এই উপলব্ধিগুলো করতে পেরেছি যখন নিজে সন্তানের মা হয়েছি, তিলে তিলে প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছি কত কষ্ট করে সন্তানদের বড় করতে হয়, কত কিছু বিসর্জন দিতে হয়। যখন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম তখন আমার কাছে জীবন মূল্যহীন ভেবেছিলাম কিন্তু ভেবেছি আমার নিষ্পাপ দুইটি সন্তানের কথা, ভেবেছি আজ আমি যেমনটি অনাথ আমার সন্তানেরাও অনাথ হয়ে যাবে, যেখানে তারা নিষ্পাপ। ওদেরকে আমি পৃথিবীতে এনেছি, আমারই দায়িত্ব ওদের সুন্দর পৃথিবী দেখান। জীবন আমাকে পরিচালনা করবে না, আমি জীবনকে পরিচালনা করব, কন্ট্রোল করব। ঘুরে দাঁড়িয়েছি আর নিজে নিজে পণ করেছি, এই একই সময় আমার সারাজীবন থাকতে পারে না, জীবন পরিবর্তনশীল, আমি বাধ্য করব পরিবর্তন হতে, আজ না হয় কাল, এই বছর না হয় পরের বছর, আর এই যে দেখুন আমি ঠিকই পরের বছর উপর দাঁড়িয়ে আছি। জীবন এক সময় দিয়েছে, আবার নিয়েছে আবার দিয়েছে, এইটাই জীবনের চক্র। আজ আপনি যার/যেটার জন্য অপেক্ষা করছেন, জীবন হয়তো তার চেয়ে বেশি কিছু দেবার জন্য অপেক্ষা করছে যদি আপনার তাতে সৎ ও নিখুঁত শ্রম থাকে এবং তাতে কোন খাঁদ / বেঈমানী থাকে না।

চলুন আমরা সবাই মিলে আত্মহত্যার প্রতিরোধ গড়ে তুলি। কেউ যদি কোন ব্যাপারে ডিপ্রেশন অথবা ডাউন ফিল করেন কাছের কারোর সাথে শেয়ার করুন অথবা কাউন্সিলিংয়ের সাহায্য নিন। এখন অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান / সংস্থা আছে যারা বিনামূল্য সাহায্য / সহযোগিতা / উপদেশ / কাউন্সিলিং করে থাকেন। নিজে নিজে ভিতরে ভিতরে কোন বিষয় নিয়ে একা একা পুড়বেন না, কথা বলুন। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কোন সমস্যাই সমাধান ছাড়া আসে না। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে এমন কোন বিপদে ফেলবেন না যা আপনি সামলাতে পারবেন না।

সবার মঙ্গল হোক এই কামনা করছি। পৃথিবী সুন্দর, জীবন সুন্দর ।

প্রিয়তি!


বিডি-প্রতিদিন/ ২১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর