ফিজিওথেরাপির বৈশ্বিক সংগঠন World Confederation for Physical Therapy (WCPT) (বর্তমান World Physiotherapy) ১৯৫১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই দিনটিকে স্মরণ করে ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য ফিজিওথেরাপি বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা’। বাংলাদেশে ২ কোটি মানুষ কোমর ব্যথায় ভুগছেন এবং কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে ব্যথার ওষুধজনিত কিডনি জটিলতা এড়ানো সম্ভব। ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই করে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন বাত ব্যথা প্যারালাইসিসজনিত। শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অনেকাংশেই প্রধান চিকিৎসা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ফিজিওথেরাপি সংস্থা এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি যুদ্ধবিগ্রহ ননকমিনিক্যাবল বিভিন্ন রোগ শারীরিক আঘাত খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, মাংসপেশি ব্যথা ও স্নায়বিক সমস্যাসহ বিভিন্ন অক্ষমতায় মানুষ ভুগছে যার চিকিৎসা সারা বিশ্বেই ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সমাধান হয়ে আসছে। বিশেষ করে হাড় জোড়া, মাংসপেশি ও স্নায়ুর কর্মক্ষমতা হ্রাস বা লোপ পাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় এসেছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও আধুনিকতা, ব্যাপ্তি সর্বক্ষেত্রে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অসংক্রামক রোগের ওপর জাতিসংঘ সামিট করে। জাতি সংঘের ইতিহাসে শুধু একটি বিষয়ের ওপর সামিট আহ্বানের ঘটনা এটা দ্বিতীয় যা আমেরিকার নিউইয়র্কে সেদেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের মতে বিশ্বে প্রতি বছর ৩৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় শুধু অসংক্রামক রোগের কারণে, যা বিশ্বে মোট মৃত্যুর ৬০%। রিপোর্ট মতে অসংক্রামক রোগের কারণে অক্ষমতা ও মৃত্যুর হার কমানো ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সম্ভব। ফিজিওথেরাপিস্টরা হিউম্যান মুভমেন্ট এবং ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি, প্রমটিং হেলথ, ফিটনেস এবং বিশেষজ্ঞ, ফলে ফিজিওথেরাপিষ্টরা লাখ লাখ মানুষকে অক্ষমতা থেকে সক্ষমতায় আনতে ও মৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট মতে ফিজিক্যাল ইনঅ্যাকটিভিটি বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এবং এ কারণে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় বছরে, অন্যদিকে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি অসংক্রামক রোগের হার কমায়। জীবন ও জীবিকার জন্য, ভাব আদান-প্রদানের জন্য যোগাযোগের জন্য শরীরকে সচল, গতিশীল ও কর্মক্ষম রাখতে শারীরিক মুভমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে কোনো বয়সে যে কোনো কারণে শারীরিক মুভমেন্টের সমস্যাগুলোর ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতিকে কেন্দ্র করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে খুবই দ্রুততার সঙ্গে। বিশ্বব্যাপী নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিজেস, অবেসিটি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগজিনত কারণে মুভমেন্টে সমস্যাগ্রস্ত ও শারীরিক অক্ষম রোগীদের অতি দ্রুত বৃদ্ধিকে একবিংশ শতাব্দিতে স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও শিক্ষার আধুনিকায়নের মাধ্যমে এর যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিশেষে বলতে চাই বিজ্ঞানসম্মত অ্যাডভান্স ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেতে হলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স্বতন্ত্র কাউন্সিল জরুরি প্রয়োজন। সময় মতো এভিডেন্স বেইজড ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
-মো. সফিউল্লাহ প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও
পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ, ডিপিআরসি। ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ফিজিওরোপি সোসাইটি।