ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধে ক্রমেই ঘনাচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের আশঙ্কা। ইতোমধ্যে এ নিয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যাতে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু চুল্লিতে হামলা না চালায়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে-তাহলে কি ইরান পরমাণু বোমা তৈরি প্রায় শেষ করে ফেলেছে? ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলে, তাহলে তা ইসরায়েলের পক্ষে বিপজ্জনক। কারণ প্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রভাব নড়ে যাবে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে। ইসরায়েলের কাছে বিকল্প কমে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক ভলি নাসের ইন্ডিয়া টুডেকে জানান, ইরানের কি সত্যিই পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষমতা রয়েছে? অধ্যাপক নাসের জানান, ইরান বর্তমানে তাদের পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। পুরোটাই এখনো আলোচনার স্তরে। আপাতত ইরানে পরমাণু চুল্লি যেগুলো রয়েছে, তা মানুষের কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদি ইসরায়েল ওই চুল্লিগুলোয় হামলা চালায়, তাহলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। এ পরমাণু চুল্লিগুলোকে বাংকার-ব্লাস্টার দিয়ে নষ্ট করা কঠিন। কারণ পরমাণু সাইটগুলো দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত।
মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হবে : সাংবাদিক রাহুল কাঁওয়ালের প্রশ্ন ছিল-যদি ইরানের পরমাণু চুল্লিতে হামলা চালায় ইসরায়েল, তাহলে ইরানের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? অধ্যাপক নাসেরের মতে, সে ক্ষেত্রে ইরান পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের পথে হাঁটতে পারে এবং নিজেদের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। যদি এটা হয়, তাহলে তুরস্ক, সৌদি আরব ও অন্যান্য গলফ দেশও সে দৌড়ে শামিল হবে। ইসরায়েলের পক্ষে তা হবে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি। কারণ গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে।
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘাত ঘিরে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ দুটি দেশই সামরিক দিক থেকে বেশ শক্তিশালী। সামরিক শক্তিধর শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে উভয় দেশই অবস্থান করছে। সামরিক সক্ষমতায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের ১৭তম। এ অবস্থায় দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা, একে অন্যকে আক্রমণ করার ক্ষমতা ও নিজ ভূখ রক্ষার সামর্থ্য কতটুকু-এসব বিষয় খতিয়ে দেখেছে আলজাজিরা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এর ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার। অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০। সমরাস্ত্রের মধ্যে ইরানের রয়েছে ১০ হাজার ৫১৩টি ট্যাংক, ৬ হাজার ৭৯৮টি কামান এবং ৬৪০টি সাঁজোয়া যান। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর রয়েছে ৫০টি হেলিকপ্টার, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর রয়েছে আরও ৫টি। বিপরীতে ইসরায়েলের রয়েছে প্রায় ৪০০ ট্যাংক, ৫৩০টি কামান ও ১ হাজার ১৯০টি সাঁজোয়া যান। ইরানের বিমান বাহিনীর রয়েছে ৩১২টি যুদ্ধবিমান, বিপ্লবী গার্ডের রয়েছে আরও ২৩টি। ইসরায়েলের রয়েছে ৩৪৫টি যুদ্ধবিমান ও ৪৩টি জঙ্গি হেলিকপ্টার। নৌ ক্ষেত্রেও ইরান এগিয়ে। ইরানের রয়েছে ১৭টি সাবমেরিন, ৬৮টি প্যাট্রল ও কোস্টাল কমব্যাটান্ট, ৭টি রণতরি, ১২টি ল্যান্ডিং শিপ, ১১টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট, ১৮টি লজিস্টিকস ও সাপোর্ট সরঞ্জাম। ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন ও ৪৯টি প্যাট্রল ও কোস্টাল কমব্যাটান্ট। আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত নির্ভরশীল ‘আয়রন ডোম’-ব্যবস্থার ওপর। ইসরায়েলজুড়ে আছে ১০টি আয়রন ডোম ব্যাটারি। আছে আরও কিছু প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যার সাহায্যেও মধ্যম ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানা প্রতিহত করা হয়।
এদিকে ইরান গত ফেব্রুয়ারিতে স্বল্পপাল্লার আজারখশ (বজ্র) আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। এটি একটি ইনফ্রারেড শনাক্তকরণ ব্যবস্থা। সম্ভাব্য আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও তা প্রতিহত করতে এ ব্যবস্থায় যুক্ত আছে রাডার এবং ইলেকট্রো-অপটিক ব্যবস্থা। এটি যানবাহনের ওপরও স্থাপন করা যায়।