বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে সচিবালয়ে ছিল থমথমে পরিবেশ। চারপাশে কড়া নিরাপত্তা থাকলেও উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছিল নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। অনেকেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ রাখতে বারবার টেলিভিশন ও অনলাইনে গণমাধ্যম দেখছিলেন। সবার মধ্যেই একটাই কথা- বারবার বলছিলেন কী হচ্ছে দেশে, কীভাবে সমাধান হবে। এভাবে কত দিন চলবে ইত্যাদি আশঙ্কার কথা বলতে শোনা যায়।
দুপুরের দিকে সচিবালয়ের আশপাশ থেকে ভেসে আসছিল গুলি-ককটেলের শব্দ। গতকাল সচিবালয়ে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল প্রায় সব কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যেই। এদিন কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উপস্থিতি ছিল কম। হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এদিন অফিস করেন। তবে সচিবরা অফিস করেছেন। সচিবালয়ের বাইরেই অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের মধ্যে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে যানবাহন খুবই কম থাকায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসের গণপরিবহনে এসেছেন। যারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন এমন অনেক কর্মকর্তা হেঁটেও অফিসে এসেছেন বা রিকশায়। গতকাল গৃহায়ন মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, খাদ্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন। এদিন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও অন্যদের কেউ কেউ দুপুর পর্যন্ত সচিবালয়ের অফিসে আসেননি। এসব মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সচিবালয়ের বাইরে অনুষ্ঠান ও সভা থাকায় দুপুর পর্যন্ত তাঁরা আসেননি। কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী গণভবনে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সভায় ছিলেন বলে জানা গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকতা বলেন, খুব টেনশনে অফিসে এসেছি, ফিরব সেটি নিয়েও নানা দুশ্চিন্তা কাজ করছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকগুলো মৃত্য যেমন আমাদের কাম্য নয়। তেমনি আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা হচ্ছে সেটিও কাম্য নয়। এতে আমরা সত্যি বেকায়দায় পড়েছি। অফিস করতে হচ্ছে, পরিবার দুশ্চিন্তায় আছে। এদিকে গতকাল সচিবালয়ের কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও দুপুরের দিকে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশপথ কিছুক্ষণ বন্ধ রাখা হয়। এদিকে সকাল থেকেই সচিবালয় এলাকার আশপাশে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখা গেছে। অনেক কর্মকর্তা সচিবালয়ের উঁচু ভবন থেকে চারপাশের পরিস্থিতি উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতে থাকেন। দুপুর ১২টার পর থেকে সচিবালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সচিবালয়ের বাইরে থেকে একটু পরপরই গুলি ও ককটেল কখনো সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। পরে বিকালের দিকে যাওয়া-আসার জন্য এক নম্বর গেট ছাড়া সব গেটই বন্ধ রাখা হয় নিরাপত্তার কারণে।