দুর্গাপূজার ছুটিতে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। গতকাল এ দুই পর্যটন কেন্দ্রে হাজার হাজার পর্যটক সমুদ্র দর্শন করেন। আগের দিন থেকেই তারা সৈকতে আসতে থাকেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : শরতের আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা। বইছে মৃদু দখিনা বাতাস। সাগরে ছোট ছোট ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। এমন দৃশ্য উপভোগ করছেন পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা। কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে নোনাজলে গা ভাসিয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মাতছেন, অনেকে ঘুরছেন ঘোড়া-মোটরসাইকেল কিংবা ওয়াটার বাইকে। কেউ আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মোটকথা শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটিতে গতকাল কুয়াকাটার সৈকতে ভিড় জমিয়েছেন হাজারো পর্যটক।
পর্যটকের এমন উপস্থিতিতে অনেকটা উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনা বেড়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বুকিং রয়েছে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে তৎপর রয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। তবে মোটরসাইকেল চালক ও ক্যামেরাম্যানদের উৎপাতসহ লকার সংকটের কথা জানিয়েছেন পর্যটকরা।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই সৈকতে পর্যটকের আগমন ঘটে। এসব পর্যটক সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি রাখাইন পল্লী, রাখাইন মার্কেট, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধমন্দির, ঝাউবাগান, গঙ্গামতীর লেক, লাল কাঁকড়ার চর, লেম্বুর বন, আন্ধারমানিক নদী মোহনা, ফাতরার বনসহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে ঝিনুক মার্কেট, ফিশ ফ্রাই ও খাবার হোটেলসহ পর্যটননির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচাকেনায় যেন ধুম পড়ে গেছে। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর পর্যটকের এমন বাড়তি উপস্থিতিতে অনেকটা উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ীরা। পর্যটক ফরিদ হোসেন বলেন, পূজার ছুটি পেয়েছি, তাই কুয়াকাটা বেড়াতে এসেছি। এখানকার পরিবেশ সবকিছুই ভালো লেগেছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (কুটুম)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, একই স্থানে দাঁড়িয়েই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া এখানে রয়েছে প্রকৃতিঘেরা সৌন্দর্য। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ায় ঢাকা থেকে আসতে সময়ও কম লাগে। তাই ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটা সৈকত বেছে নেন। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আনছার উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
কক্সবাজার : দুর্গাপূজার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে চার দিনের ছুটি চলছে। এই লম্বা ছুটিতে অবকাশযাপনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ছুটে আসছেন পর্যটকরা। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকরা শহরের সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করছেন। আগামী রবিবার পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুরে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকত ভরপুর পর্যটকে। দীর্ঘদিন নি®প্রাণ থাকা সৈকত তীর সেই পুরনো রূপে ফিরেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসাবাণিজ্যে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে।
শহরের কলাতলী মোড় থেকে ৮৪ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ছুটছেন পর্যটকরা। এ সড়কে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লী, হিমছড়ির জাতীয় উদ্যান, ছড়া ও ঝরনা, ইনানি ও পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত, টেকনাফ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গে পর্যটক ভিড় করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ চার দিনে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, পর্যটকের চাপ সামাল দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও সেবা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।