পরিবারের জন্য একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন কুরমান শেখ (৪৯)। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের রেললাইনের পাশে। ঢাকার সাভারে দৈনিক ভাড়ার ভিত্তিতে দোকান নিয়ে মুরগির ব্যবসা করতেন তিনি। স্ত্রী শিল্পী খাতুন, ছেলে রমজান শেখ (২২) ও মেয়ে মিতু আক্তার (২০) কে নিয়ে সেখানেই বসবাস করতেন।
২০ জুলাই গুলিতে নিহত হয়ে মারা যান প্রতিবন্ধী কুরমান শেখ। সংসারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করা একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দিশাহারা তার পরিবার। কথা হয় কুরমান শেখের ছেলে রমজান শেখের সঙ্গে। রমজান শেখের ভাষ্য, তার বাবা ঢাকার সাভারের মাছবাজার এলাকায় দেড় দশক ধরে মুরগির ব্যবসা করতেন। রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের রেললাইনের পাশে জরাজীর্ণ টিনের ঘর। একমাত্র ঘরছাড়া আর কিছু নেই তাদের। মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা প্রতিবন্ধী। তিনি সরকারি ভাতা পেতেন। বাবার উপার্জনের টাকা দিয়ে আমাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ও আমার বোনকে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন। বাবা খুব কষ্ট করে সংসার চালাতেন। তার স্বপ্ন ছিল আমাকে বিসিএস ক্যাডার বানাবেন। আমার বোনকে ব্যাংকার বানাবেন। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে খুনসুটি করতেন। ২০ জুলাই বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাবা হাতজোড় করে বলেছিলেন আমাকে গুলি করবেন না। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। আমি মারা গেলে আমার ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে যাবে। তবুও গুলি করে হত্যা করা হয় আমার বাবাকে। বাবার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। বাবাকে গ্রামের বাড়ির পাশে কবর দিয়েছি। ১২ আগস্ট সাভারে চলে এসেছি। এরপর পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার ওই মুরগির ব্যবসা শুরু করেছি। ২০ জুলাই দুপুরে সাভারে সংঘর্ষ শুরু হয়। দ্রুত কুরমান শেখকে বাড়িতে আসার জন্য ফোন করেন মেয়ে মিতু। দোকান বন্ধ করে মাছবাজার এলাকায় বরফকলে ঢুকে আশ্রয় নেন। বেলা পৌনে ২টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয় কুরমান। সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।